Sunday, May 29, 2016

সূরা কাফিরুন'র তাফসীর | সবগুলি আয়াতের তাফসীর সংযুক্ত করা হয়েছে।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ

১। বল, হে কাফের দল! [1]

[1] الكَافِرون শব্দে ال কে জিনস (শ্রেণী) বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এখানে শুধুমাত্র ঐ সমস্ত কাফেরদেরকে বিশেষভাবে বুঝানো হয়েছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জানতেন যে, তাদের মৃত্যু কুফর ও শিরকের অবস্থাতেই ঘটবে। কেননা, এ সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর কিছু সংখ্যক মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তারা আল্লাহর ইবাদত করেছিল। (ফাতহুল ক্বাদীর)

لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ

২। আমি তার ইবাদত করি না, যার ইবাদত তোমরা কর।

-

وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ

৩। এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি।

-

وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ

৪। এবং আমি ইবাদতকারী নই তার, যার ইবাদত তোমরা করে থাক।

-

وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ

৫। এবং তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। [1]

[1] কিছু মুফাসসির প্রথম আয়াতের অর্থকে বর্তমান কালের জন্য এবং দ্বিতীয় আয়াতের অর্থকে ভবিষ্যৎ কালের জন্য ব্যবহার করেছেন। (অর্থাৎ, আমি বর্তমানে তোমাদের উপাস্যের ইবাদত করি না এবং তোমরা আমার উপাস্যের ইবাদত কর না এবং ভবিষ্যতেও এরূপ হতে পারে না।) কিন্তু ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেছেন, এইরূপ কষ্টকল্পনার কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু তাকীদের জন্য একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি আরবী ভাষার সাধারণ রীতি। এই প্রকার রীতি কুরআন কারীমের কয়েক স্থানে; যেমন, সূরা রাহমান ও সূরা মুরসালাতে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপ এই সূরাতেও অর্থকে জোরদার করার জন্য বারবার একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। মোট কথা হল, এটা কখনই সম্ভব নয় যে, আমি তাওহীদের পথ পরিত্যাগ করে শিরকের পথ অবলম্বন করে নেব; যেমন তোমরা চাচ্ছ। আর যদি আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে হিদায়াত না লিখে থাকেন, তাহলে তোমরাও তাওহীদ ও আল্লাহর উপাসনা থেকে বঞ্চিতই থাকবে। এ কথা সেই সময় বলা হয়েছে, যখন কাফেররা মহানবী (সাঃ)-এর কাছে এই (নিরপেক্ষ সন্ধি) প্রস্তাব রাখল যে, এক বছর আমরা তোমার উপাস্যের ইবাদত করব এবং এক বছর তুমি আমাদের উপাস্যের ইবাদত করবে।

لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ

৬। তোমাদের দ্বীন (শিরক) তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন (ইসলাম) আমার জন্য। [1]

[1] অর্থাৎ, যদি তোমরা তোমাদের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাক এবং তা ত্যাগ করতে রাজী না হও, তাহলে আমিও নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, তা কেন ত্যাগ করব? (لَناَ أَعْمَالُناَ وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ) অর্থাৎ, আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। (আল ক্বাস্বাস ৫৫ আয়াত) (তাছাড়া তোমাদের কর্ম ভ্রষ্ট এবং আমার কর্ম শ্রেষ্ঠ। আর অন্যায়ের সাথে কোন আপোস নেই।)

সূরা আল-মাসাদ'র তাফসীর | সবগুলি আয়াতের তাফসীর সংযুক্ত করা হয়েছে।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ

১। ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। [1]

[1] يَدَا শব্দটি يَدٌ এর দ্বিবচন। অর্থ হল দুই হাত। এ থেকে উদ্দেশ্য হল তার সত্তা বা দেহ। এই আংশিক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করে সমষ্টিগত অর্থ নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সে নিজে ধ্বংস হয়ে যাক। এই বদ্দুআটি সেই বদ্দুআর জওয়াবে বলা হয়েছে, যা আবু লাহাব মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি রাগ ও শত্রুতাবশে করেছিল।
تَبَّ শব্দের অর্থ হল ধ্বংস ও বরবাদ হয়েছে। অর্থাৎ, সে ধ্বংস হয়েছে। (অতীত কালকে দু’আর অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।) অথবা এটা হল খবর। বদ্দুআর সাথে সাথেই মহান আল্লাহ তার ধ্বংস ও বরবাদ হওয়ার খবর ঘোষণা করেছেন। সুতরাং বদর যুদ্ধের কয়েক দিন পরেই সে এক প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হল; যে রোগে দেহে প্লেগের মত গুটলি প্রকাশ পায়। এই রোগই তাকে মৃত্যুর গ্রাস বানালো। তিন দিন পর্যন্ত তার লাশ এমনিই পড়ে ছিল। পরিশেষে তা খুবই দুর্গন্ধময় হয়ে উঠল। অতঃপর ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এবং মান-সম্মানের ভয়ে তার ছেলেরা তাকে দূর থেকে পাথর ও মাটি ঢেলে দেহটাকে দাফন করে দিল। (আইসারুত তাফাসীর)

مَا أَغْنَىٰ عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ

২। তার ধন-সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন উপকারে আসবে না।[1]

[1] উপার্জনে তার নেতৃত্ব, পদমর্যাদা এবং তার সন্তানরাও শামিল। অর্থাৎ, যখন আল্লাহর পাকড়াও এল, তখন কোন জিনিস বা কেউ তার কাজে এল না।

سَيَصْلَىٰ نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ

৩। অচিরেই সে শিখাবিশিষ্ট (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে।

-

وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ

৪। এবং তার স্ত্রীও; যে ইন্ধন বহনকারিণী। [1]

[1] অর্থাৎ, জাহান্নামে সে স্বামীর আগুনে কাঠ এনে এনে নিক্ষেপ করতে থাকবে; যাতে আগুন বেশী বৃদ্ধি পাবে। আর তা হবে আল্লাহর তরফ হতে। অর্থাৎ, যেমন সে দুনিয়াতে নিজ স্বামীর কুফর ও ঔদ্ধত্যে মদদ যোগাত, তেমনি আখেরাতেও তার আযাব বৃদ্ধিতে মদদ যোগাতে থাকবে। (ইবনে কাসীর) কিছু সংখ্যক উলামা বলেন, এই মেয়েটি কাঁটার ঝাড় এনে মহানবী (সাঃ)-এর চলার পথে রেখে দিত। (যাতে তিনি কাঁটাবিদ্ধ হয়ে কষ্ট পান।) আবার কোন কোন আলেম বলেন, ‘ইন্ধন বহনকারিণী’ বলে তার চুগলী করার অভ্যাসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। চুগলখোরের জন্য ব্যবহূত এটি আরবীর একটি পরিভাষা। এই মেয়েটি কুরাইশদের নিকট গিয়ে মহানবী (সাঃ)-এর গীবত করত এবং তাদেরকে তাঁর প্রতি শত্রুতা করায় উসকানি দিত। (ফাতহুল বারী)

فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ

৫। তার গলদেশে খেজুর অাঁশের পাকানো রশি। [1]

[1] جِيدٌ অর্থ হল গর্দান, ঘাড়। আর مَسَد অর্থ হল মজবুত রশি; চাহে তা কোন ঘাস অথবা খেজুরের অাঁশ বা ছিলকার অথবা লোহার তার পাকানো হোক; যেমন এক এক মুফাসসির এর এক এক রকম অর্থ বর্ণনা করেছেন। কিছু উলামার মতে, সে দুনিয়াতে ঐ রশি নিজ ঘাড়ে বা গলদেশে ঝুলিয়ে রাখত। কিন্তু সবচেয়ে বেশী সঠিক বলে মনে হয় যে, জাহান্নামে তার গলায় যে বেড়ি হবে, তা হবে লোহার তারের পাকানো রশি। مَسَد শব্দ দ্বারা উপমা দিয়ে রশির মজবুতী ও শক্ত অবস্থার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে।

সূরা আল-ইখলাস'র তাফসীর | সবগুলি আয়াতের তাফসীর সংযুক্ত করা হয়েছে।


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

১। বল, তিনিই আল্লাহ একক (অদ্বিতীয়)।

-

اللَّهُ الصَّمَدُ

২। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। [1]

[1] অর্থাৎ, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

৩। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন। [1]

[1] অর্থাৎ, জনক নন এবং জাতকও নন। তাঁর থেকে কিছু উদ্ভূত নয় এবং তিনিও কিছু থেকে উদ্ভূত নন।

وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

৪। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ­ই নেই। [1]

[1] কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়; না তাঁর সত্তায়, না তাঁর গুণাবলীতে এবং না তাঁর কর্মাবলীতে। ‘‘তাঁর মত কোন কিছুই নেই।’’ (সূরা শুরা ১১ নং আয়াত)
হাদীসে ক্বুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ আমাকে গালি দেয়; অর্থাৎ, আমার সন্তান আছে বলে। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে না জন্ম দিয়েছি; না কারো হতে জন্ম নিয়েছি। আর না কেউ আমার সমতুল্য আছে। (সহীহ বুখারী সূরা ইখলাসের তফসীর অধ্যায়।)
এই সূরা ঐ সকল লোকদের বিশ্বাস খন্ডন করে, যারা একাধিক উপাস্যে বিশ্বাসী, যারা মনে করে আল্লাহর সন্তান আছে, যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক স্থাপন করে এবং যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না।

সূরা আল-ফালাক'র তাফসীর | সবগুলি আয়াতের তাফসীর সংযুক্ত করা হয়েছে।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ

১। বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার প্রতিপালকের কাছে।[1]

[1] الفَلَق এর সহীহ অর্থ হল, ঊষা বা প্রভাতকাল। এখানে বিশেষ করে ‘ঊষার প্রতিপালক’ এই জন্য বলা হয়েছে যে, যেমন আল্লাহ তাআলা রাতের অন্ধকারকে দূরীভূত করে দিনের উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে পারেন, তেমনি তিনি ভয় ও আতঙ্ক দূর করে আশ্রয় প্রার্থীকে নিরাপত্তা দান করতে পারেন। অথবা মানুষ যেমন রাত্রে এই অপেক্ষা করে যে, সকালের উজ্জ্বলতা এসে উপস্থিত হবে, ঠিক তেমনিভাবে ভীত মানুষ আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে (নিরাপত্তা লাভে) সফলতার প্রভাত উদয়ের আশায় থাকে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

২। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট হতে। [1]

[1] এটি একটি ব্যাপকার্থবোধক বাক্য। এতে শয়তান ও তার বংশধর, জাহান্নাম এবং ঐ সমস্ত জিনিস হতে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে, যার দ্বারা মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

৩। অনিষ্ট হতে রাত্রির, যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। [1]

[1] রাতের অন্ধকারেই হিংস্র জন্তু, ক্ষতিকর প্রাণী ও পোকা-মাকড়; অনুরূপভাবে অপরাধপ্রবণ হিংস্র মানুষ নিজ নিজ জঘন্য ইচ্ছা পূরণের আশা নিয়ে বাসা হতে বের হয়। এই বাক্য দ্বারা সে সকল অনিষ্টকর জীব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
 غَاسِق শব্দের অর্থ হল রাত্রিকাল এবং وَقَب শব্দের অর্থ হল প্রবেশ করে, ছেয়ে যায় প্রভৃতি।

وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ

৪। এবং ঐসব আত্মার অনিষ্ট হতে, যারা (যাদু করার উদ্দেশ্যে) গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়। [1]

[1] النَّفَّاثَات শব্দটি হল স্ত্রীলিঙ্গ, যা النُّفُوس উহ্য বিশেষ্যর বিশেষণ। مِن شَرِّ النفوس النَّفَّثَات অর্থাৎ, গ্রন্থি বা গিরাতে ফুৎকারকারী আত্মার অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, যাদুর মত জঘন্য কর্মের কর্তা নর ও নারী উভয়ই। মোটকথা, এ দিয়ে যাদুকরের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া হয়েছে। যাদুকর মন্ত্র পড়ে পড়ে ফুঁক মেরে গিরা দিতে থাকে। সাধারণতঃ যাকে যাদু করা হয়, তার চুল অথবা কোন ব্যবহূত জিনিস সংগ্রহ করে তাতে যাদু করা হয়।

وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

৫। এবং অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে। [1]

[1] হিংসা তখন হয়, যখন হিংসাকারী হিংসিত ব্যক্তির নিয়ামতের ধ্বংস কামনা করে। সুতরাং তা থেকেও পানাহ চাওয়া হয়েছে। কেননা, হিংসাও এক জঘন্যতম চারিত্রিক ব্যাধি; যা মানুষের পুণ্যরাশিকে ধ্বংস করে ফেলে।

সূরা আন-নাস'র তাফসীর | সবগুলি আয়াতের তাফসীর সংযুক্ত করা হয়েছে।

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

১। বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের নিকট। [1]

[1] رَبّ (প্রতিপালক) এর অর্থ হল যে, যিনি শুরু থেকেই -- মানুষ যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন থেকেই -- তার তত্ত্বাবধান ও লালন-পালন করতে থাকেন; পরিশেষে সে সাবালক ও জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে যায়। তাঁর এই কাজ শুধু কিছু সংখ্যক লোকের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সকল মানুষের জন্য ব্যাপক। আবার কেবলমাত্র সকল মানুষের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি সমস্ত সৃষ্টির প্রতিপালন করে থাকেন। এখানে কেবল ‘মানুষ’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে মানুষের সেই মান ও মর্যাদাকে ব্যক্ত করার জন্য যা সকল সৃষ্টির উপরে রয়েছে।

مَلِكِ النَّاسِ

২। যিনি মানুষের মালিক। [1]

[1] যে সত্তা সমস্ত মানুষের প্রতিপালন ও তত্ত্বাবধান করে থাকেন; তিনিই হলেন সকল কিছুর মালিক, অধিপতি ও রাজা হওয়ার উপযুক্ত।

إِلَٰهِ النَّاسِ

৩। যিনি মানুষের উপাস্য। [1]

[1] যিনি সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা এবং যাঁর হাতে সারা দুনিয়ার বাদশাহী, তিনিই হলেন সর্বপ্রকার ইবাদত ও উপাসনা পাওয়ার যোগ্য এবং তিনিই সমস্ত মানুষের একক মাবূদ (উপাস্য)। সুতরাং আমি সেই সুমহান ও সুউচ্চ সত্তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ

৪। আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে। [1]

[1] الوَسوَاس শব্দটি কিছু উলামার নিকট ইসম ফায়েল (কর্তৃকারক) مُوَسوِس এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আর কিছু সংখ্যক উলামা বলেন, এর আসল হল ذِي الوِسوَاس
অসঅসা বা কুমন্ত্রণা গুপ্ত শব্দকে বলা হয়। শয়তান তার অনুপলব্ধ পদ্ধতিতে মানুষের অন্তরে নানা প্রকার প্রলোভন, কুমন্ত্রণা বা ফুসমন্ত্র দিয়ে থাকে; তাকেই ‘অসঅসা’ বলা হয়। الخَنّاس শব্দের অর্থ হল সরে পড়ে আত্মগোপনকারী। এটি শয়তানের গুণবিশেষ। যেহেতু যখন কোন স্থানে আল্লাহর যিকর করা হয়, তখন সে স্থান হতে শয়তান সরে পড়ে এবং যখন কেউ আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়, তখন সে তার অন্তরে ছেয়ে যায়।

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ

৫। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।

-

مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

৬। জ্বিন ও মানুষের মধ্য হতে। [1]

[1] অর্থাৎ, এই কুমন্ত্রণাদাতা হল দুই শ্রেণীর। (১) শয়তান জ্বিনঃ শয়তান জ্বিনদেরকে মহান আল্লাহ মানুষকে ভ্রষ্ট করার ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন শয়তান সাথী হিসাবে সদা বিদ্যমান থাকে; সেও তাকে ভ্রষ্ট করার প্রচেষ্টায় থাকে। হাদীসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী (সাঃ) ঐ কথা লোকদেরকে বললেন, তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাথেও কি শয়তান বিদ্যমান থাকে। তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আমার সাথেও থাকে। তবে আল্লাহ তাআলা তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য দান করেছেন; যার ফলে সে আমার অনুগত হয়ে গেছে। সে আমাকে মঙ্গল ব্যতীত কিছু আদেশ করে না।’’ (সহীহ মুসলিম, কিয়ামতের বিবরণ অধ্যায়)
অনুরূপ অন্য হাদীসে এসেছে যে, একদা নবী (সাঃ) যখন ই’তিকাফ অবস্থায় ছিলেন তখন তাঁর পবিত্রা সহধর্মিণী স্বাফিয়্যাহ (রাঃ)  তাঁর সাক্ষাতে (মসজিদে) এলেন। সময়টা রাত্রিবেলা ছিল। সাক্ষাতের পর তিনি তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে বের হলেন। রাস্তায় দুই আনসারী সাহাবী পার হচ্ছিলেন। তিনি তাঁদেরকে ডেকে বললেন, ‘‘এটি আমার স্ত্রী স্বাফিয়্যাহ বিন্তে হুয়াই।’’ তাঁরা আরজ করলেন যে, ‘আপনার সম্পর্কে কি আমাদের কোন কুধারণা হতে পারে হে আল্লাহর রসূল?!’ তিনি বললেন, ‘‘তা তো ঠিক কথা। কিন্তু শয়তান যে মানুষের রক্ত-ধমনীতে রক্তের মতই প্রবাহিত হয়। আমার আশঙ্কা হল যে, হয়তো বা সে তোমাদের মনে কোন সন্দেহ প্রক্ষিপ্ত করে দিতে পারে।’’ (সহীহ বুখারী, আহকাম অধ্যায়)
(২) মানুষ শয়তানঃ মানুষের মধ্যে কিছু শয়তান আছে যারা উপদেষ্টা, হিতাকাঙ্ক্ষী ও দয়াবানরূপে এসে অপরকে ভ্রষ্ট হতে উদ্বুদ্ধ করে।
কোন কোন উলামা বলেন, শয়তান যাদেরকে ভ্রষ্ট করে, তারা হল দুই শ্রেণীর। অর্থাৎ, শয়তান মানুষকে যেমন ভ্রষ্ট করে তেমনি জ্বিনকেও ভ্রষ্ট করে থাকে। তবে এখানে মানুষের অন্তরের উল্লেখ তার ভ্রষ্টতার তুলনামূলক আধিক্যের কারণে করা হয়েছে। নচেৎ জ্বিন সম্প্রদায়ও শয়তানের কুমন্ত্রণায় ভ্রষ্টতার শিকার হয়। কিছু সংখ্যক উলামা বলেন, কুরআনে জ্বিনদের জন্যও ‘রিজাল’ (পুরুষ মানুষ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (সূরা জিন ৬ নং আয়াত) সুতরাং তারাও মানুষ শব্দে শামিল।

সূরা আল-ফাতিহা'র তাফসীর | সবগুলি আয়াতের তাফসীর সংযুক্ত করা হয়েছে।

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

(১) অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে (আরম্ভ করছি)।

‘বিসমিল্লাহ’র পূর্বে ‘আক্বরাউ’ ‘আবদাউ’ অথবা ‘আতলু’ ফে’ল (ক্রিয়া) উহ্য আছে। অর্থাৎ, আল্লাহর নাম নিয়ে পড়ছি অথবা শুরু করছি কিংবা তেলাঅত আরম্ভ করছি। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আরম্ভ করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। সুতরাং নির্দেশ করা হয়েছে যে, খাওয়া, যবেহ করা, ওযু করা এবং সহবাস করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়। অবশ্য ক্বুরআনে করীম তেলাঅত করার সময় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়ার পূর্বে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ্শায়ত্বানির রাজীম’ পড়াও অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘অতএব যখন তুমি ক্বুরআন পাঠ করবে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর।’’ (সূরা নাহল ৯৮ আয়াত)।

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

(২) সমস্ত প্রশংসা[1] সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।[2]

[1] الحَمد এর মধ্যে যে ال রয়েছে, তা استغراق (সমূদয়) অথবা اختصاص (নির্দিষ্টীকরণ)এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই বা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট; কেননা প্রশংসার প্রকৃত অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহই। কারো মধ্যে যদি কোন গুণ, সৌন্দর্য এবং কৃতিত্ব থাকে, তবে তাও মহান আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট। অতএব প্রশংসার অধিকারী তিনিই। ‘আল্লাহ’ শব্দটি মহান আল্লাহর সত্তার এমন এক সতন্ত্র নাম যার ব্যবহার অন্য কারো জন্য করা বৈধ নয়। ‘আলহামদু লিল্লাহ’ কৃতজ্ঞতা-জ্ঞাপক বাক্য। এর বহু ফযীলতের কথা হাদীসসমূহে এসেছে। একটি হাদীসে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’কে উত্তম জিকির বলা হয়েছে এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’কে উত্তম দুআ বলা হয়েছে। (তিরমিযী, নাসায়ী ইত্যাদি) সহীহ মুসলিম এবং নাসায়ীর বর্ণনায় এসেছে, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ দাঁড়িপাল্লা ভর্তি করে দেয়। এ জন্যই অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহ এটা পছন্দ করেন যে, প্রত্যেক পানাহারের পর বান্দা তাঁর প্রশংসা করুক। (সহীহ মুসলিম)
[2] رَبّ মহান আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের অন্যতম। যার অর্থ হল, প্রত্যেক জিনিসকে সৃষ্টি ক’রে তার প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা ক’রে তাকে পরিপূর্ণতা দানকারী। কোন জিনিসের প্রতি সম্বন্ধ (ইযাফত) না করে এর ব্যবহার অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। عَالَمِيْن عَالَم (বিশ্ব-জাহান) শব্দের বহুবচন। তবে সকল সৃষ্টির সমষ্টিকে عَالَم বলা হয়। এই জন্যেই এর বহুবচন ব্যবহার হয় না। কিন্তু এখানে তাঁর (আল্লাহর) পূর্ণ প্রতিপালকত্ব প্রকাশের জন্য এরও বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, সৃষ্টির ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়। যেমন, জ্বিন সম্প্রদায়, মানব সম্প্রদায়, ফিরিশ্তাকুল এবং জীব-জন্তু ও পশু-পক্ষীকুল ইত্যাদি। এই সমস্ত সৃষ্টির প্রয়োজনসমূহও একে অপর থেকে অবশ্যই ভিন্নতর। কিন্তু বিশ্ব-প্রতিপালক প্রত্যেকের অবস্থা, পরিস্থিতি এবং প্রকৃতি ও দেহ অনুযায়ী তার প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করে থাকেন।

الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

(৩) যিনি অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু।

رَحما  শব্দটি فَعلان এর ওজনে। আর رَحِيم শব্দটি فَعِيل এর ওজনে। দু’টোই মুবালাগার স্বীগা (অতিরিক্ততাবোধক বাচ্য)। যার মধ্যে আধিক্য ও স্থায়িত্বের অর্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ অতীব দয়াময় এবং তাঁর এ গুণ অন্যান্য গুণসমূহের মত চিরন্তন। কোন কোন আলেমগণ বলেছেন ‘রাহীম’-এর তুলনায় ‘রাহমান’-এর মধ্যে মুবালাগা (অতিরিক্ততাঃ রহমত বা দয়ার ভাগ) বেশী আছে। আর এই জন্যই বলা হয়, ‘রাহমানাদ্দুনিয়া অল-আখিরাহ’ (দুনিয়া ও আখেরাতে রহমকারী)। দুনিয়াতে তাঁর রহমত ব্যাপক; বিনা পার্থক্যে কাফের ও মু’মিন সকলেই তা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। তবে আখেরাতে তিনি কেবল ‘রাহীম’ হবেন। অর্থাৎ, তাঁর রহমত কেবল মু’মিনদের জন্য নির্দিষ্ট হবে। اللَّهُمَّ! اجْعَلْنَا مِنْهُمْ (আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত কর!) (আ-মীন)

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

(৪) (যিনি) বিচার দিনের মালিক।[1]

[1] যদিও দুনিয়াতে কর্মের প্রতিদান দেওয়ার নীতি কোন না কোনভাবে চালু আছে, তবুও এর পূর্ণ বিকাশ ঘটবে আখেরাতে। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে তার ভাল ও মন্দ কর্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ প্রতিদান শান্তি ও শাস্তি প্রদান করবেন। অনুরূপ দুনিয়াতে অনেক মানুষ ক্ষণস্থায়ীভাবে কারণ-ঘটিত ক্ষমতা ও শক্তির মালিক হয়। কিন্তু আখেরাতে সমস্ত এখতিয়ার ও ক্ষমতার মালিক হবেন একমাত্র মহান আল্লাহ। সেদিন তিনি বলবেন, ‘‘আজ রাজত্ব কার?’’ অতঃপর তিনিই উত্তর দিয়ে বলবেন, ‘‘পরাক্রমশালী একক আল্লাহর জন্য।’’
 {يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِنَفْسٍ شَيْئًا وَالأَمْرُ يَوْمَئِذٍ للهِ} الانفطار:19 (যেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সকল কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।) এটা হবে বিচার ও প্রতিদান দিবস।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

(৫) আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।

ইবাদতের অর্থ হল, কারো সন্তুষ্টি লাভের জন্য অত্যধিক কাকুতি-মিনতি এবং পূর্ণ নম্রতা প্রকাশ করা। আর ইবনে কাসীর (রঃ) এর উক্তি অনুযায়ী ‘শরীয়তে পূর্ণ ভালবাসা, বিনয় এবং ভয়-ভীতির সমষ্টির নাম হল ইবাদত।’ অর্থাৎ, যে সত্তার সাথে ভালবাসা থাকবে তাঁর অতিপ্রাকৃত মহাক্ষমতার কাছে অসামর্থ্য ও অক্ষমতার প্রকাশও হবে এবং প্রাকৃত ও অতিপ্রাকৃত শক্তি দ্বারা তাঁর পাকড়াও ও শাস্তির ভয়ও থাকবে। এই আয়াতে সরল বাক্য হল, [نَعْبُدُكَ وَنَسْتَعِيْنُكَ] (আমরা তোমার ইবাদত করি এবং তোমার কাছে সাহায্য চাই।) কিন্তু মহান আল্লাহ এখানে مفعول (কর্মপদকে) فعل (ক্রিয়াপদ)-এর আগে এনে [إيَاكَ نَعْبُدَ وَإيَاكَ نَسْتَعِيْنُ] বলেছেন। আর এর উদ্দেশ্য বিশেষত্ব সৃষ্টি করা। (যেহেতু আরবী ব্যকরণে যে পদ সাধারণতঃ পরে ব্যবহার হয় তা পূর্বে প্রয়োগ করা হলে বিশেষত্বের অর্থ দিয়ে থাকে।) সুতরাং এর অর্থ হবে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং কেবল তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ এখানে স্পষ্ট যে, ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জায়েয নয়, যেমন সাহায্য কামনা করাও তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে বৈধ নয়। এই বাক্য দ্বারা শির্কের পথ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যাদের অন্তরে শির্কের ব্যাধি সংক্রমণ করেছে, তারা লৌকিক সাহায্য প্রার্থনা ও অলৌকিক সাহায্য প্রার্থনার মধ্যে পার্থক্যকে দৃষ্টিচ্যুত ক’রে সাধারণ মানুষদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। তারা বলে, দেখুন! যখন আমরা অসুস্থ হই, তখন সুস্থতার জন্য ডাক্তারের নিকট সাহায্য চাই। অনুরূপ বহু কাজে স্ত্রী, চাকর, ড্রাইভার এবং অন্যান্য মানুষের কাছেও সাহায্য কামনা করি। এইভাবে তারা বুঝাতে চায় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছেও সাহায্য কামনা করা জায়েয। অথচ প্রাকৃত বা লৌকিক সাহায্য একে অপরের নিকট চাওয়া ও করা সবই বৈধ; এটা শির্ক নয়। এটা তো মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এমন এক নিয়ম-নীতি, যাতে সমস্ত লৌকিক কার্য-কলাপ বাহ্যিক হেতুর ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। এমন কি নবীরাও (সাধারণ) মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। ঈসা (আঃ) বলেছিলেন, [ مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللهِ] অর্থাৎ, কারা আছে যারা আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? (সূরা আলে ইমরান ৫২ আয়াত) আর আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদেরকে বলেন, [وَتَعَاوَنُوا عَلَى البِرِّ وَالتَّقْوَى] অর্থাৎ, তোমরা নেকী এবং আল্লাহভীতির কাজে একে অন্যের সাহায্য কর। (সূরা মাইদাহ ২ আয়াত) বুঝা গেল যে, এ রকম সাহায্য (চাওয়া ও করা) নিষেধও নয় এবং শির্কও নয়। বরং তা বাঞ্ছনীয় ও প্রশংনীয় কাজ। পারিভাষিক শির্কের সাথে এর কি সম্পর্ক? শির্ক তো এই যে, এমন মানুষের কাছে সাহায্য কামনা করা যে বাহ্যিক হেতুর ভিত্তিতে কোন সাহায্য করতে পারবে না। যেমন, কোন মৃত ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করা, তাকে বিপদ থেকে মুক্তিদাতা এবং প্রয়োজন পূরণকারী মনে করা, তাকে ভাল-মন্দের মালিক ভাবা এবং বিশ্বাস করা যে, সে দূর এবং নিকট থেকে সকলের ফরিয়াদ শোনার ক্ষমতা রাখে। এর নাম হল, অলৌকিক পন্থায় সাহায্য চাওয়া এবং তাকে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করা। আর এরই নাম হল সেই শির্ক, যা দুর্ভাগ্যক্রমে অলী-আওলিয়াদের মহববতের নামে মুসলিম দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। أعاذنا الله منه
 তাওহীদ তিন প্রকারের। এখানে মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর তাওহীদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তাই তাওহীদের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রকারের কথা উল্লেখ করে দেওয়া সঙ্গত মনে হয়। এই প্রকারগুলো হলঃ তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ (প্রতিপালকত্বের একত্ববাদ), তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (উপাস্যত্বের একত্ববাদ) এবং তাওহীদুল আসমা অসসিফাত (নাম ও গুণাবলীর একত্ববাদ)।
 ১। তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহর অর্থ হল, এই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা, মালিক, রুযীদাতা, নিয়ন্তা ও পরিচালক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। নাস্তিক ও জড়বাদীরা ব্যতীত সকল মানুষই এই তাওহীদকে স্বীকার করে। এমনকি মুশরিক (অংশীবাদী)রাও এটা বিশ্বাস করতো এবং আজও করে। যেমন ক্বুরআন কারীমে মুশরিকদের এ তাওহীদকে স্বীকার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে বের করেন এবং কেই বা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তারা বলবে, আল্লাহ।’’ (অর্থাৎ, সমস্ত কর্ম সম্পাদনকারী হলেন আল্লাহ।) (সূরা ইউনুসঃ ৩১) অন্যত্র বলেছেন, ‘‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তাহলে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।’’ (সূরা যুমার ৩৮) তিনি আরো বলেছেন, ‘‘জিজ্ঞেস কর, এই পৃথিবী এবং এতে যা আছে তা কার, যদি তোমরা জানো ? তারা ত্বরিৎ বলবে, আল্লাহর; বল, তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না ? জিজ্ঞেস কর, কে সপ্তাকাশ ও মহা আরশের অধিপতি ? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না । জিজ্ঞেস কর, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে; যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর উপর আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জানো ? তারা বলবে, আল্লাহর। (সূরা মু’মিনুন ৮৪-৮৯) এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত আছে।
২। তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর অর্থ হল, সর্ব প্রকার ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহকে মনে করা। আর ইবাদত সেই সব কাজকে বলা হয়, যা কোন নির্দিষ্ট সত্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় অথবা তাঁর অসন্তুষ্টির ভয়ে করা হয়। (অন্য কথায়ঃ ইবাদত প্রত্যেক সেই গুপ্ত বা প্রকাশ্য কথা বা কাজের নাম, যা আল্লাহ পছন্দ করেন ও যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।) সুতরাং কেবল নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জই ইবাদত নয়, বরং কোন সত্তার নিকট দুআ ও আবেদন করা তার নামে মানত করা, তার সামনে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা, তার তাওয়াফ করা এবং তার কাছে আশা রাখা ও তাকে ভয় করা ইত্যাদিও ইবাদত। তাওহীদে উলূহিয়্যাহ হল (উল্লিখিত) সমস্ত কাজ কেবল মহান আল্লাহর জন্য সম্পাদিত হওয়া। কবরপূজার ব্যাধিতে আক্রান্ত আম-খাস বহু মানুষ তাওহীদে উলূহিয়্যাতে শির্ক করছে। উল্লিখিত ইবাদতসমূহের অনেক প্রকারই তারা কবরে সমাধিস্থ ব্যক্তিদের এবং মৃত বুযুর্গদের জন্য ক’রে থাকে যা সুস্পষ্ট শির্ক।
৩। তাওহীদুল আসমা অসসিফাত হল, মহান আল্লাহর যে গুণাবলী ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলিকে কোন রকমের অপব্যাখ্যা এবং বিকৃত করা ছাড়াই বিশ্বাস করা। আর এই গুণাবলীর অনুরূপ অধিকারী (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে মনে না করা। যেমন, অদৃশ্য জগতের জ্ঞান (গায়বী খবর) রাখা তাঁর গুণ, দূর ও নিকট থেকে সকলের ফরিয়াদ শোনার শক্তি তিনি রাখেন, বিশ্বজাহানের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার সব রকমের এখতিয়ার তাঁরই; এই ধরনের আরো যত ইলাহী গুণাবলী আছে আল্লাহ ব্যতীত কোন নবী, ওলী এবং অন্য কাউকেও এই গুণের অধিকারী মনে না করা। করলে তা শির্ক হয়ে যাবে। বড় দুঃখের বিষয় যে, কবরপূজারীদের মধ্যে এই প্রকারের শির্ক ব্যাপক। তারা আল্লাহর উল্লিখিত গুণে অনেক বুযুর্গদেরকে অংশীদার বানিয়ে রেখেছে। أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهُ

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

(৬) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও;

اهدِنَا (হিদায়াত) শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন, পথের দিক নির্দেশ করা, পথে পরিচালনা করা এবং গন্তব্যস্থানে পৌঁছিয়ে দেওয়া। আরবীতে এটাকে ‘ইরশাদ’, ‘তাওফীক্ব’, ‘ইলহাম’ এবং ‘দালালাহ’ ইত্যাদি শব্দে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থ হল, আমাদেরকে সঠিক পথের দিকে দিক নির্দেশ কর, এ পথে চলার তাওফীক্ব দাও এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ, যাতে আমরা (আমাদের অভীষ্ট) তোমার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। পক্ষান্তরে সরল-সঠিক পথ কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা অর্জিত হয় না। এই সরল-সঠিক পথ হল সেই ‘ইসলাম’ যা নবী করীম (সাঃ) বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করেছেন এবং যা বর্তমানে ক্বুরআন ও সহীহ হাদীসের মধ্যে সুরক্ষিত।

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

(৭) তাদের পথ -- যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ;[1] তাদের পথ -- যারা ক্রোধভাজন (ইয়াহুদী) নয় এবং যারা পথভ্রষ্টও (খ্রিষ্টান) নয়। [2] (আমীন)

[1] এ হল ‘স্বিরাত্বে মুস্তাক্বীম’ তথা সরল পথের ব্যাখ্যা। অর্থাৎ, সেই সরল পথ হল ঐ পথ, যে পথে চলেছেন এমন লোকেরা যাঁদেরকে তুমি নিয়ামত, অনুগ্রহ ও পুরস্কার দান করেছ। আর নিয়ামত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত দলটি হল নবী, শহীদ, চরম সত্যবাদী (নবীর সহচর) এবং নেক লোকদের দল। যেমন আল্লাহ সূরা নিসার মধ্যে বলেছেন, ‘‘আর যে কেউ আল্লাহ এবং রসূলের আনুগত্য করবে (শেষ বিচারের দিন) সে তাদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ। আর সঙ্গী হিসাবে এরা অতি উত্তম।।’’ (সূরা নিসা ৬৯) এই আয়াতে এ কথাও পরিষ্কার ক’রে বলে দেওয়া হয়েছে যে, পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লোকদের পথ হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের পথ, অন্য কোন পথ নয়।
[2] কোন কোন বর্ণনা দ্বারা সুসাব্যস্ত যে, مَغْضُوْبٌ عَلَيْهِمْ (ক্রোধভাজনঃ যাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে তারা) হল ইয়াহুদী। আর ضَالِّيْنَ (পথভ্রষ্ট) বলতে খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনে আবী হাতেম বলেন, মুফাসসিরীনদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, {المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ} হল ইয়াহুদীরা এবং{الضَّالِّينَ}  হল খ্রিষ্টানরা। (ফাতহুল ক্বাদীর) তাই সঠিক পথে চলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যক হল যে, তারা ইয়াহুদী এবং খ্রিষ্টান উভয় জাতিরই ভ্রষ্টতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে। ইয়াহুদীদের সব থেকে বড় ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা জেনে-শুনেও সঠিক পথ অবলম্বন করেনি। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করতে কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ করতো না। তারা উযাইর (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বলতো। তাদের পন্ডিত ও সাধু-সন্নাসীদের হালাল ও হারাম করার অধিকার আছে বলে মনে করতো। আর খ্রিষ্টানদের সব থেকে বড় ত্রুটি এই ছিল যে, তারা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ক’রে তাঁকে আল্লাহর পুত্র এবং তিনের এক সাব্যস্ত করেছে। দুঃখের বিষয় যে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার মধ্যেও এই ভ্রষ্টতা ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। যার কারণে তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত এবং ঘৃণিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভ্রষ্টতার গহ্বর থেকে বের করুন; যাতে তারা অবনতি ও দুর্দশার বর্ধমান অগ্নিগ্রাস থেকে সুরক্ষিত থাকে।
সূরা ফাতিহার শেষে ‘আ-মীন’ বলার ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ) খুব তাকীদ করেছেন এবং তার ফযীলতও উল্লেখ করেছেন। কাজেই ইমাম এবং মুক্তাদী সকলের ‘আ-মীন’ বলা উচিত। নবী করীম (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ জেহরী (সশব্দে পঠনীয়) নামাযগুলোতে উচ্চস্বরে এমন ভাবে ‘আ-মীন’ বলতেন যে, মসজিদ গমগম করে উঠত। (ইবনে মাজা-ইবনে কাসীর) বলাই বাহুল্য যে, উঁচু শব্দে ‘আ-মীন’ বলা নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের কৃত আমল।
আ-মীনের কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে। যেমনঃ (كَذَلِكَ فَلْيَكُنْ) এই রকমই হোক। (لاَ تُخَيِّبْ رَجَآءَنَا) আমাদের আশা ব্যর্থ করো না। (اللَّهُمَّ اسْتَجِبْ لَنَا) হে আল্লাহ! আমাদের দুআ কবুল কর।

Thursday, May 26, 2016

কালেমা শাহাদাত



আশ্‌হাদু আল-লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু-লা-শারীকালাহু ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসূলুহু।
আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁহার বান্দা ও প্রেরিত রাসুল।
 
Ašhadu an lā ilāha illā-llāh waḥdahu lā šarīka lahu, wa ašhadu anna muḥammadan ʿabduhu wa rasūluhu.


I bear witness that (there is) no God except Allah; He has no partner, and I bear witness that Muhammad (Sall-Allahu Alayhi wa Sallam) is His Servant and Messenger.

ঈমান কি ? ঈমান কিভাবে বৃদ্ধি পাবে ? ঈমান কোথায় পাওয়া যাবে ?


ঈমান কি ?
ঈমান কিভাবে বৃদ্ধি পাবে ?
ঈমান কোথায় পাওয়া যাবে ?
বর্ননাগুলি সংক্ষেপ করা হলো। বিস্তারিত এখানে আলোচনা কষ্টকর।
ক) ঈমান এক আল্লাহ ও অদৃশ্য 7 টি বিষয়ের উপর পূর্ন বিশ্বাস স্থাপন ও উহার উপর বাস্তব আমল করার নাম ঈমান।
খ)ঈমান হলো মুখে ঐ 7টি বিষয়ের উপর আন্তরীক বিশ্বাস স্থাপন করা, মুখে প্রকাশ করা এবং বাস্তবে আমল করার নাম ঈমান।
গ) অদৃশ্ব্র্য 7টি বিষয় হলো: (1) আমানতু বিল্লাহি (2) ওয়া মালাইকাতিহি (3) ওয়া কুতুবিহি (4) ওয়া রাসুলিহি (5) ওয়াল ইয়াও মিল আখেরে (6) ওয়াল কাদরী খাইরিহি শাররীহি মিনাল্লাহি তায়ালা (7) ওয়াল বাছে বাদাল মওত।
(ঘ) ঈমান বৃদ্ধি করার উপায় হলো বেশী বেশী কালেমা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ) এর উপর বিস্তারীত আলোচনা করা।
” কালেমার অন্তর্নিহিত অর্থ হলো: আমরা দুই চোখে যা কিছু দেখী বা না দেখী আল্লাহ ব্যতীত সমস্ত কিছুই মাখলুক। মাখলুক কিছুই করতে পারেনা আল্লাহ পাকের সাহায্য ব্যতীত এবং আল্লাহ পাক সমস্ত কিছুই করতে পারেন কোন কিছুর সাহায্য ব্যতীত। ”
স্বাধারন একটি উদাহরন:— প্রত্যেকের ঘরে ছোট বাচ্চা, কৈশর, যুবক, বৃদ্ধ সকলেই বসবাস করেন। ঘরে যে খাবার পাকানো হয় সেই একই পাতিলে পাকানো খাবার ঘরের বাচ্চা, কৈশর,যূবক ও বৃদ্ধ সকলেই খাইতেছে। কিন্ত ফলাফল কি দ্বারায় ? বাচ্চারা,কৈশর ও যুবক ঐ একই পাতিলের খাবার খেয়ে ক্রমা্ন্বয়ে বড় ও শক্তিশালী হইতেছে কিন্ত আপনার ঘরের বৃদ্ধ পিতা, মাতা বা দাদা , দাদী কি আরও শক্তিশালী হচ্ছেন বা আরও বড় হচ্ছেন ? নিশ্চয়ই বলবেন না। বরং তারা ঐ একই খাবার খেয়ে দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছেন। ভাতের যদি শক্তি থাকতো তাহলে ঘরের সকলকেই শক্তিশালী করা কথা কিন্ত হা হচ্চে না। তার মানে কি?? ভাতের কোন শক্তি নেই কাউকে শক্তিশালী বা বড় করা। আল্লাহপাকের হুকুমে ভাত এক একজনের ভিতরে পৃথক পৃথক ভাবে ক্রিয়া করছে। এটাই কালেমার দাবী। মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহ পাকের হুকুম ব্যতীত। তেমনি পবিত্র কোরআনের বর্ননা অনুযায়ী ছুড়ি ইসমাইল আ: কে কাটার শক্তি রাখেনি , আগুন ইব্রাহীম আ: কে পোড়ানোর কোন ক্ষমতা রাখেনি, মাছ ইউনুস আ: কে হজম করতে পারেনি। পবিত্র কোরআনে মানুষকে ঈমান শিখানোর জন্যই আল্লাহ পাক এসমস্ত ব্যতিক্রম ঘটনাসমূহ ঘটিয়েছেন । মানুষকে ঈমান শিখানোর জন্যই আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের অথিকাংশ আয়াত নাযীল করেছেন। আহকাম সম্পর্কীত আয়াত মাত্র 500-600 মাত্র। সুতরাং বিষয়টি আমাদের আন্তরীকভাবে অনুধানের প্রয়োজন।
(ঙ) গাড়ী নষ্ট হলে ওয়ার্কশপে নিতে হয় মেরামতের জন্য, জাহাজ নষ্ট হলে ডকইয়ার্ডে নিতে হয়, মানুষের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে নিতে হয় হাসপাতালে। কিন্ত মানুষের যখন দ্ভীল বা ঈমান নষ্ট হয়ে যায় তখন উহা মেরামতের জন্য নিতে হবে মসজিদি পরিবেশে,ওলামাগনের সোহবতে। মসজিদই হচ্ছে ঈমান তৈরীর কারখানা।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহজে ঈমান বুঝার,ও আমল করার তৌফিক দান করুন ।আমীন।

কালেমা তাইয়্যেবার চারটি বৃহৎ !!! বৃহৎ!! বৃহৎ !!!! ফজিলত !!! লাভ !



কালেমা তাইয়্যেবাহ : “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাুদুর রাসুলুল্লাহ। “
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহ পাকের রাসুল সা:।
আভিধানিক অর্থ: (১) আমরা দুচোখে যা কিছু দেখি বা না দেখি আল্লাহ ব্যতীত সবকিছুই আল্লাহ পাকের সৃষ্টি মাখলূক। মাখলুক কিছুই করিতে পারে না আল্লাহ পাকের সাহায্য ব্যতিত। আল্লাহ পাক সবকিছুই করতে পারেন তার নিজ ইচ্ছায় ও কোনকিছুর সাহায্য ব্যতীত।
(২) মানুষের জন্য সমস্ত কামীয়াবী ও সফলতা একমাত্র রাসুল সা: এর নূরানী সুন্নত তরীকার মধ্যেই নিহিত। অন্য কোন তরীকায় বা মত ও পথে কোন সফলতা আল্লাহ পাক রাখেননি।

কালেমা তাইয়্যেবাহ এর ফজিলত !!! লাভ !!! বা উপকারীতা ::
যে ব্যক্তি দিবসে একবার ইখলাসের সহিত কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ পাঠ করবে তার——
(ক) পিছনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন।
(খ) চার হাজার নেকি প্রাপ্ত হবে।
(গ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হবে।
(ঘ) জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যাবে।
(তাফসিরে মাজহারী )

কালেমা তায়্যিবাহ জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয় !!!



ফজিলত:
যে ব্যক্তি দিবসে একবার ইখলাসের সহিত কালিমায়ে তায়্যিবাহ পড়ে, তার
(ক) তার পিছনের গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়।
(খ) চার হাজার নেকী প্রাপ্ত হয়।
(গ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়।
(ঘ) জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়।
 

(তাফসিরে মাজহারী )

কালেমা তায়্যিবাহ : “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।”

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহা বা মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসুল।
আধ্বাত্বীক অর্থ (লা্ ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর ): আমরা দুখ চোখে যাহা কিছু দেখি বা না দেখি আল্লাহ ব্যতীত সকলই মাখলুক কিছুই করিতে পারে না আল্লাহ পাকের হুকুম ব্যতীত এবং আল্লাহ পাক সব কিছুই করিতে পারেন নিজ ইচ্ছায় কারো সাহায্য ব্যতীত।
এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর আধ্বাত্বীক অর্থ: দুনিয়াতে যত প্রকার মত ও পথ আছে সবকিছুর উধ্র্বে ও কল্যান রয়েছে একমাত্র মুহাম্মাদ সা: এর নূরানী ত্বরীকায় বা মতামতে। অন্য কোন ত্বরীকায় সফলতা নাই। ইহা অন্তকরনে বিশ্বাস, মুখে প্রকাশ ও বাস্তবে আমলের নামই ঈমান।

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌”র ক্ষমতা ।

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
 
লেখকঃ শেইখ সলীহ্‌ ইবন্‌ ফাওযান আল–ফাওযান 
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ আবদ্‌ আল-আহাদ | ওয়েব এডিটিং: Dipu Chowdhury

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌

অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোন সত্য ইলাহ্‌ নেই। এই কথা যদি কেউ সত্যতার সাথে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চারন করে, এ কথার অর্থ যা বলে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, বিশ্বাস এবং চালচলনে এই কথাকে বাস্তবিক রূপদান করে তাহলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয় জীবনেই একথার প্রভাব আসলেই চমৎকার এবং প্রশংসনীয়।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর তিনটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাঃ


[১] গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌কে একত্রীকরণঃ

একথা গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌কে ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান করবে। ফলে তারা বাতিল শক্তি তথা তাদের শত্রুদের বিপক্ষে সংগ্রামে বিজয়ী হবে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা সকলেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন কর্তৃক মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে অনুসরণ করব, মেনে চলব। যখন আমাদের আকীদাহ্‌ তথা ধর্মীয় বিশ্বাস হবে এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

আর তোমরা একযোগে আল্লাহ্‌র রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারন কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না। [সূরা আল ইমরান; ৩:১০৩]

আর তারা যদি তোমাকে প্রতারিত করার ইচ্ছা করে তবে তোমার জন্যে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে স্বীয় সাহায্য দ্বারা এবং মুমিনগণ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। আর তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করেছেন, তুমি যদি পৃথিবীর সমুদয় সম্পদও ব্যয় করতে তবুও তাদের অন্তরে প্রীতি, সদ্ভাব ও ঐক্য স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ্‌ই ওদের পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করে দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তিনি মহাশক্তিমান, মহাকৌশলী। [সূরা আনফাল; ৮:৬২-৬৩]

আকীদাহ্‌ তথা বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারনেই মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে আজ এতো বিভেদ, অনৈক্য, বিভ্রান্তি আর বিশৃঙ্খলা। একমাত্র এই কারনেই মুসলিম উম্মাহ্‌র ভিতর আজ এতো দ্বন্দ্ব আর হানাহানির সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

নিশ্চয় যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌হাওলায় রয়েছে, পরিশেষে তিনি তাদেরকে তাদের কার্যকলাসম্পর্কে অবিহিত করবেন। [সূরা আন’আম; ৬:১৫৯]

কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়েই আনন্দিত। [সূরা মু’মিনূন; ২৩:৫৩]

আর তাই মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃতঅর্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা যতক্ষণ না তারা ঈমান এবং আকীদাহ্‌ সম্পর্কে যথার্থ এবং বিশুদ্ধ উপলব্ধি অর্জন করতে পেরেছে। এখানেই নিহিত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর তাৎপর্য। একথার তাৎপর্য উপলব্ধি না করে কারোর পক্ষে ঈমান ও আকীদাহ্‌গত পরিশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে এবং পরে আরবের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর কী ক্ষমতা।

[২] শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন:

যে সমাজ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং এর শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয় সেই সমাজে বিরাজ করে শুধুই শান্তি ও নিরাপত্তা। এমন সমাজের প্রতিটি মানুষই কেবলমাত্র সেই কাজের ব্যপারে যত্নশীল হবে যা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাদের জন্য হালাল বা বৈধ ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে, তারা সেই সমস্ত কাজ পরিহার করে চলবে যা তিনি হারাম বা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সমাজের প্রতিটি মানুষই তখন তাদের এক ও অভিন্ন আকীদাহ্‌ তথা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অনুসরণ করে সকল কাজ-কর্ম সম্পাদন করবে। কারণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর দাবী হল, যে কেউ এই কথার মৌখিক স্বীকৃতি দেবে তাকে এর সত্যতা বাস্তবায়ন করতে হবে কর্মের মাধ্যমে। কর্মহীন মৌখিক ঐ স্বীকৃতি একটি অন্তঃসার শূন্য স্লোগান ছাড়া কিছুই নয়। কাজেই কালিমার শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং সেই শিক্ষাকে মেনে চলে এমন সমাজের লোকদেরকে দ্বারা কখনও জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়, পারস্পারিক হানাহানি ইত্যাদি সংঘটিত হতে পারেনা। এমন সমাজের লোকেরা গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৎকর্ম সম্পাদনের জন্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং ভালবাসবে। আর তাদের এই পারস্পারিক সহযোগিতা ও ভালবাসা হবে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্যে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। [সূরা হুজুরাত; ৪৯:১০]

বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত সে সব আরবদের জীবনে যারা একসময় ইসলাম মেনে চলত না। অথচ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌” এর পরশে তাদের জীবনে এসেছিল আমূল পরিবর্তন। ইসলাম পূর্ব সময়ে তাদের জীবন ছিল পারস্পারিক মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, খুনাখুনি, লুটতরাজ ইত্যাদিতে জর্জরিত। সেই মানুষগুলোই যখন গ্রহণ করল তখন সব কিছু বদলে গেল। যারা রক্তের বদলে রক্ত চাইত তারা ইসলামের কারনেই শান্তি সৌহার্দ আর সম্প্রীতির এক অমায়িক বন্ধনে আবদ্ধ হল। যারা ছিল চরম শত্রু তারাই হল পরম বন্ধু। এই হল ইসলাম তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর ক্ষমতা। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্‌রাসূল; আর যারা এর সাথে আছে তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরে সহানুভূতিশীল…। [সূরা ফাত্‌হ; ৮৪:২৯]

…এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র যে নেয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, তৎপরে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে…। [সূরা আল-ইমরান; ৩:১০৩]

[৩] সুমহান লক্ষ্য অর্জন:

প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জন, পৃথিবীতে খেলাফাত (ইসলামিক কর্তৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠা, ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা এবং সমস্ত রকম বাতিল ও শয়তানি অপশক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া- এসবের একটিও সম্ভব নয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর বাস্তবিক প্রয়োগ ছাড়া। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে সৎকর্ম করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফাত (প্রতিনিধিত্ব) অবশ্যই দান করবেন, যেমন তিনি (প্রতিনিধিত্ব) দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা শুধু আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবেনা, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী (ফাসিক) । [সূরা নূর; ২৪:৫৫]

কাজেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন উল্লেখিত সুমহান লক্ষ্যসমূহের অর্জনকে আমাদের জন্য শর্তসাপেক্ষ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, আমরা এগুলো কেবল মাত্র তখনই অর্জন করতে সমর্থ হব যখন আমরা শুধু মাত্র এবং কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত এবং আনুগত্য করব, তাঁর দেয়া বিধানকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে চলব এবং তাঁর সাথে কোন শরীক স্থাপন করব না। আর এটাই হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর নিহিত মর্মার্থ।

আল-ইস্‌তিক্কামাহ্‌, ইস্যু নং-১

পাদটীকাঃ

[১] লা ইলাহা ইল্লালাহ্‌, মানাহা, মাকানাতুহা ওয়া ফাদ্‌লুহা (পৃষ্ঠা নং:৩৬-৩৯) হতে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত।

কালেমা তামজীদ


সুবহানআল্লাহী ওয়ালহামদু লিল্লাহী ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিইল আযীম।

মহিমান্বিত আল্লাহ্‌র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র। আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। আল্লাহ্‌ মহান। সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহ্‌র, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র। আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন শক্তি নাই, কোন ক্ষমতা নাই, তিনি সম্মানিত, তিনি মহান।

Subḥāna-llāhi, wa-l-ḥamdu li-llāhi, wa lā ilāha illā-llāhu, Wa-llāhu akbar, Wa lā ḥawla wa lā quwwata illā bi-llāhi-l-ʿalīyyi-l-ʿaẓīm


Exalted is Allah, and praise be to Allah, and there is no deity except Allah, and Allah is the Greatest. And there is no might nor power except in Allah, the Most High, the Most Great.

দোয়া কুনুত ( বাংলা তর‍্যমা ও অর্থ)


আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্‌তায়ীনুকা, ওয়া নাস্‌তাগ্‌ফিরুকা, ওয়া নু’মিন বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্‌ফারি মুলহিক।

 অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

আত্তাহিয়াতু / দরুদ / দোয়া মাসুরা


আত্তাহিয়াতু/তাশাহুদ

=> আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্‌ সালাওয়াতু, ওয়াত্‌ তাইয়িবাতু। আস্‌সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্‌সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্‌ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্‌হাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
l
দুরুদ শরীফ

=> اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

=> উচ্চারন ঃ আললাহুম্মা সাললিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাললাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আললাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অনুবাদ ঃ যে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম। হে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।

দোয়া মাসুরা/Dua Masura

=> উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুল্মান কাসীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা; ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গফুরুর রাহীম।
অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র তুমিই; অতএব তুমি আপনা হইতে আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা কর এবং আমার প্রতি দয়া কর। তুমি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল দয়ালু।

Wednesday, May 25, 2016

যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করেনি তার হজ্জ কি শুদ্ধ হবে?

 
 
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
 
প্রশ্ন: আমি ১৪২২হিঃ সালে হজ্জ আদায় করেছি। তবে আমার নিকট কিছু মানুষের ঋণ আছে। কারণ হচ্ছে- আমি কিছু মানুষকে কর্জে হাসানা (ঋণ) দিয়েছিলাম; তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে, এখন এ অর্থ পরিশোধ করার দায় আমার উপর। আমি একজন শাইখকে জিজ্ঞেস করেছিলাম: আমি তো ঋণ পরিশোধ করিনি; এমতাবস্থায় হজ্জ করা জায়েয হবে কিনা? শাইখ বলেছেন: জায়েয হবে। কারণ আপনি জানেন যে, আপনি অচিরেই ঋণ পরিশোধ করে দিবেন, ইনশাআল্লাহ।একই বিষয়ে আপনাদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিপরীত তথ্য পেলাম। এমতাবস্থায় আমার হজ্জ কি কবুল হয়েছে? কারণ আমি ঋণ পরিশোধ না করে হজ্জে গেছি, পাওনাদারদের কাছ থেকে অনুমতি নেইনি। যদি আমার হজ্জ মাকবুল না হয়; তাহলে আমার করণীয় কি? আমার প্রথম হজ্জ কি ফরজ এবং দ্বিতীয় হজ্জ কি সুন্নত?
উত্তরঃ  আলহামদুলিল্লাহ।
কোন প্রশ্নকারীর ইবাদত কবুল হওয়া সম্পর্ক প্রশ্ন করা এবং উত্তরদাতার এ সম্পর্কে উত্তর দেয়া উচিত নয়। কারণ ইবাদত কবুল হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর নিকট। বরং প্রশ্ন করতে হবে ও উত্তর দিতে হবে ইবাদত শুদ্ধ হওয়া সম্পর্কে, ইবাদতের শর্তাবলি ও রুকনগুলো পরিপূর্ণ হওয়া সম্পর্কে।
যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল কিন্তু তার জিম্মাদারিতে অন্যদের পাওনা ঋণ রয়ে গেছে তার হজ্জ সহিহ হবে; যদি হজ্জের রুকন ও শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয়। সম্পদের সাথে বা ঋণের সাথে হজ্জের শুদ্ধতার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যে ব্যক্তির ঋণ আছে সে ব্যক্তির জন্য হজ্জ না করা উত্তম। যে অর্থ সে হজ্জ আদায়ে খরচ করবে সে অর্থ ঋণ আদায়ে খরচ করা উত্তম এবং শরয়ি বিবেচনায় সে সামর্থ্যবান নয়। এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির আলেমগণের ফতোয়া নিম্নরূপ:
১- হজ্জ আদায় করার জন্য যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করেছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন: ইনশাআল্লাহ হজ্জ সহিহ। হজ্জের শুদ্ধতার উপর ঋণ গ্রহণের কোন প্রভাব নেই। শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গাদইয়ান।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/৪২) থেকে সমাপ্ত]
২- তাঁরা বলেন:
“হজ্জ ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে- সামর্থ্যবান হওয়া। সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে- আর্থিক সামর্থ্য। আর যে ব্যক্তির উপর ঋণ রয়েছে, ঋণদাতারা যদি ঋণ আদায় করার আগে হজ্জ আদায়ে বাধা দেয় তাহলে সে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করবে না। কারণ সে সামর্থ্যবান নয়। আর যদি তারা ঋণ আদায়ে চাপ না দেয় এবং সে জানে যে, তারা সহজভাবে নিবে তাহলে তার জন্য হজ্জ আদায় করা জায়েয আছে। হতে পারে হজ্জ তার ঋণ আদায় করার জন্য কোন কল্যাণের পথ খুলে দিবে।”
মুফতিঃ শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গাদইয়ান
[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/৪২) থেকে সমাপ্ত] সূত্রঃ ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইট

শাবান মাসের ফযিলত ও আমল সমূহ।



শাবান আরবি বর্ষের অন্যান্য মাস সমূহের তুলনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ মাস। রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি উক্ত মাসটি হজরত মোহম্মাদ (সা.) এর সাথে সম্পৃক্ত। হজরত মোহাম্মাদ (সা.) রমজান মাসের রোযার সাথে উক্ত মাসটির রোজাকে মিলিয়ে দিতেন। তিনি বলেছেন: শাবান মাস হচ্ছে আমার মাস। ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন: যখন শাবান মাস আসতো তখন ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) তার সাহাবীদেরকে একত্রিত করে বলতেন: হে আমার সাহাবীরা তোমরা কি জান এটা শাবান মাস। হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বলতেন: শাবান মাস হচ্ছে আমার মাস সুতরাং তোমরা এ মাসে রোজা রাখ। আল্লাহর শপথ আমি আমার বাবা হুসাইন ইবনে আলী (আ.) এর কাছ থেকে শুনেছি এবং তিনি আমার দাদা হজরত আলী (আ.) এর কাছ থেকে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন: যে ব্যাক্তি রাসুল (সা.) এর ভালবাসায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শাবান মাসে রোযা রাখবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেস্ত দান করবেন।
সাফওয়ান জামাল বলেছেন: আমাকে ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেন তোমার আশে পাশে যারা আছে তাদেরকে শাবান মাসে রোযা রাখতে বল। আমি তাঁকে বলি হে ইমাম আমি আপনার উপরে উৎসর্গিত হই এই মাসে কি রোজা রাখাতে ফযিলত আছে? তিনি জবাবে বলেন: হ্যাঁ, রাসুল (সা.) যখনই শাবান মাসের চাঁদ দেখতেন তখন তিনি তাঁর উম্মতের মাঝে প্রচার করতে বলতেন যে, হে আমার উম্মতেরা তোমরা জেনে রাখ যে, শাবান মাস হচ্ছে আমার মাস। সুতরাং খোদার রহমত বর্ষিত হবে সে ব্যাক্তির উপরে, যে এ মাসে রোজা রাখবে। অতঃপর ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেন যে, হজরত আলী (আ.) বলেছেন: আমি যখন থেকে শাবান মাসের রোজা সম্পর্কে শুনেছি তখন আজ পর্যন্ত এ মাসে রোজা বাদ দেইনি এমনকি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ মাসের রোজাকে বাদ দিব না ইনশাআল্লাহ। (মাফাতিহুল জেনান, দ্বিতীয় অধ্যায়, শাবান মাসের আমল)
১- এ মাসে তিনজন ইমাম (আ.) এবং হজরত আব্বাস (আ.) এর জন্মগ্রহণ করেন।
২- আউলিয়াগণ এ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন এবং দোয়ায়ে শাবানিয়ার তেলাওয়াত করতেন। উক্ত দোয়াটি হচ্ছে এ মাসের উত্তম আমল সমূহের মধ্যে একটি। উক্ত দোয়ার কিছু অংশ এমনও আছে যা সারা বছর পড়ার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। (আল মুরাকেবাত, পৃষ্ঠা ১৭৪)

শাবান মাসের সাধারণ আমল সমূহ:

১- ইস্তেগফার পাঠ করা:
প্রত্যেকদিন ৭০ বার পড়তে হবে
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَ أَسْأَلُهُ التَّوْبَةَ

২- প্রত্যেকদিন ৭০ বার পড়তে হবে 

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لا إِلهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمنُ الرَّحِيمُ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَ أَتُوبُ إِلَيْهِ‏

বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে উক্ত মাসে সবচেয়ে উত্তম দোয়া এবং যিকর হচ্ছে ইস্তেগফার পাঠ করা। যদি কেউ উক্ত মাসে প্রত্যেক দিন ৭০ বার ইসস্তেগফার পাঠ করে তাহলে তাকে অন্যান্য মাসে ৭০ হাজার ইস্তেগফার পাঠ করার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে।
৩- সাদক্বা দান করা:
শাবান মাসে অর্ধেক পরিমাণ খুরমা হলেও সাদক্বা দানের জন্য তাকিদ করা হয়েছে। যদি কেউ এমনটি করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দান করেন।
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত মাসে রোজা রাখা এবং সাদক্বা দান করা সম্পর্কে বলেছেনঃ একজন লোক রজব মাসের রোজা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন কেন তোমরা শাবান মাস সম্পর্কে অনবগত? রাবী জিজ্ঞাসা করে হে রাসুল (সা.) এর সন্তান! যদি কেউ এ মাসে একদিন রোজা রাখে তাহলে তাকে কি পরিমাণ সওয়াব দান করা হবে? তিনি বলেনঃ শপথ আল্লাহর তার সওয়াব হচ্ছে বেহেস্ত। সে আবার জিজ্ঞাসা করে হে রাসুল (সা.) এর সন্তান! উক্ত মাসের সবচেয়ে উত্তম আমল কি? তিনি বলেনঃ সাদক্বা প্রদান করা এবং ইস্তেগফার পাঠ করা। যদি কেউ এ মাসে সাদক্বা প্রদান করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন ভাবে লালন পালন করবেন যেভাবে তোমরা উটের বাচ্চাকে লালন পালন কর।
৪- এ মাসে হাজার বার পাঠ করা ‍উত্তম:
لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَ لَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
পাঠ করে তাহলে তাকে হাজার মাসের সমপরিমাণ ইবাদতের সওয়াব দান করা হবে।
৫- উক্ত মাসের প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে ২ রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে ১০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে। নামাজান্তে ১০০ বার দুরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে। অতঃপর দোয়া চাইতে হবে।
৬- সালাওয়াত পাঠ করা:
উক্ত মাসে অধিক সালাওয়াত পাঠ করা উত্তম।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ عَجِّل فَرَجَهُم
৫- ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) থেকে বর্ণিত দুরুদ শরিফ পাঠ করা। উক্ত দুরুদ শরিফটি শাবান মাসের প্রত্যেকদিন যাওয়ালের সময় (যোহরের সময়) এবং মধ্য রাতে পাঠ করা উত্তম:
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسالَةِ وَمُخْتَلَفِ الْمَلاَّئِکةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ وَاَهْلِ بَیتِ الْوَحْىِ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ الْفُلْک الْجارِیةِ فِى اللُّجَجِ الْغامِرَةِ یاءْمَنُ مَنْ رَکبَها وَیغْرَقُ مَنْ تَرَکهَا الْمُتَقَدِّمُ لَهُمْ مارِقٌ وَالْمُتَاَخِّرُ عَنْهُمْ زاهِقٌ وَاللاّزِمُ لَهُمْ لاحِقٌ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ الْکهْفِ الْحَصینِ وَغِیاثِ الْمُضْطَرِّ الْمُسْتَکینِ وَمَلْجَاءِ الْهارِبینَ وَعِصْمَةِ الْمُعْتَصِمینَ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ صَلوةً کثیرَةً تَکونُ لَهُمْ رِضاً وَلِحَقِّ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ اَداَّءً وَقَضاَّءً بِحَوْلٍ مِنْک وَقُوَّةٍ یا رَبَّ الْعالَمینَ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ الطَّیبینَ الاْبْرارِ الاْخْیارِ الَّذینَ اَوْجَبْتَ حُقُوقَهُمْ وَفَرَضْتَ طاعَتَهُمْ وَوِلایتَهُمْ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَاعْمُرْ قَلْبى بِطاعَتِک وَلا تُخْزِنى بِمَعْصِیتِک وَارْزُقْنى مُواساةَ مَنْ قَتَّرْتَ عَلَیهِ مِنْ رِزْقِک بِما وَسَّعْتَ عَلَىَّ مِنْ فَضْلِک وَنَشَرْتَ عَلَىَّ مِنْ عَدْلِک وَاَحْییتَنى تَحْتَ ظِلِّک وَهذا شَهْرُ نَبِیک سَیدِ رُسُلِک شَعْبانُ الَّذى حَفَفْتَهُ مِنْک بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوانِ الَّذى کانَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَیهِ وَالِه وَسَلَّمَ یدْاَبُ فى صِیامِهِ وَقِیامِهِ فى لَیالیهِ وَاَیامِهِ بُخُوعاً لَک فى اِکرامِهِ وَاِعْظامِهِ اِلى مَحَلِّ حِمامِهِ اَللّهُمَّ فَاَعِنّا عَلَى الاِْسْتِنانِ بِسُنَّتِهِ فیهِ وَنَیلِ الشَّفاعَةِ لَدَیهِ اَللّهُمَّ وَاجْعَلْهُ لى شَفیعاً مُشَفَّعاً وَطَریقاً اِلَیک مَهیعاً وَاجْعَلْنى لَهُ مُتَّبِعاً حَتّى اَلْقاک یوْمَ الْقِیمَةِ عَنّى راضِیاً وَ عَنْ ذُنُوبى غاضِیاً قَدْ اَوْجَبْتَ لى مِنْک الرَّحْمَةَ وَالرِّضْوانَ وَاَنْزَلْتَنى دارَ الْقَرارِ وَمَحَلَّ الاْخْیارِ

৬- মুনাজাতে শাবানিয়েহ:
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম আলী (আ.) এবং তাঁর পরবর্তি ইমামগণ শাবান মাসে উক্ত দোয়াটি গুরুত্ব সহকারে পাঠ করতেন।
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَاسْمَعْ دُعائى اِذا دَعَوْتُک وَاْسمَعْ نِدائى اِذا نادَیتُک وَاَقْبِلْ عَلىَّ اِذا ناجَیتُک فَقَدْ هَرَبْتُ اِلَیک وَوَقَفْتُ بَینَ یدَیک مُسْتَکیناً لَک مُتَضرِّعاً اِلَیک راجِیاً لِما لَدَیک ثَوابى وَتَعْلَمُ ما فى نَفْسى وَتَخْبُرُ حاجَتى وَتَعْرِفُ ضَمیرى وَلا یخْفى عَلَیک اَمْرُ مُنْقَلَبى وَمَثْواىَ وَما اُریدُ اَنْ اُبْدِئَ بِهِ مِنْ مَنْطِقى واَتَفَوَّهُ بِهِ مِنْ طَلِبَتى وَاَرْجُوهُ لِعاقِبَتى وَقَدْ جَرَتْ مَقادیرُک عَلَىَّ یا سَیدى فیما یکونُ مِنّى اِلى آخِرِ عُمْرى مِنْ سَریرَتى وَعَلانِیتى وَبِیدِک لا بِیدِ غَیرِک زِیادَتى وَنَقْصى وَنَفْعى وَضَرّى اِلهى اِنْحَرَمْتَنى فَمَنْ ذَاالَّذى یرْزُقُنى وَاِنْ خَذَلْتَنى فَمَنْ ذَاالَّذى ینْصُرُنى اِلهى اَعُوذُ بِک مِنَ غَضَبِک وَحُلُولِ سَخَطِک اِلهى اِنْ کنْتُ غَیرَ مُسْتَاْهِلٍ لِرَحْمَتِک فَاَنْتَ اَهْلٌ اَنْ تَجُودَ عَلىَّ بِفَضْلِ سِعَتِک اِلهى کاَنّى بِنَفْسى واقِفَةٌ بَینَ یدَیک وَقَدْ اَظَلَّها حُسْنُ تَوَکلى عَلَیک فَقُلْتَ ما اَنْتَ اَهْلُهُ وَتَغَمَّدْتَنى بِعَفْوِک اِلهى اِنْ عَفَوْتَ فَمَنْ اَوْلى مِنْک بِذلِک وَاِنْ کانَ قَدْ دَنا اَجَلى وَلَمْ یدْنِنى مِنْک عَمَلى فَقَدْ جَعَلْتُ الاِقْرارَ بِالذَّنْبِ اِلَیک وَسیلَتى اِلهى قَدْ جُرْتُ عَلى نَفْسى فِى النَّظَرِ لَها فَلَهَا الْوَیلُ اِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَها اِلهى لَمْ یزَلْ بِرُّک عَلَىَّ اَیامَ حَیوتى فَلا تَقْطَعْ بِرَّک عَنّى فى مَماتى اِلهى کیفَ آیسُ مِنْ حُسْنِ نَظَرِک لى بَعْدَ مَماتى وَاَنْتَ لَمْ تُوَلِّنى اِلاّ الْجَمیلَ فى حَیوتى اِلهى تَوَلَّ مِنْ اَمْرى ما اَنْتَ اَهْلُهُ وَعُدْ عَلَىَّ بِفَضْلِک عَلى مُذْنِبٍ قَدْ غَمَرَهُ جَهْلُهُ اِلهى قَدْ سَتَرْتَ عَلَىَّ ذُنُوباً فِى الدُّنْیا وَاَنَا اَحْوَجُ اِلى سَتْرِها عَلَىَّ مِنْک فى الاُْخْرى اِذْ لَمْ تُظْهِرْها لاَِحَدٍ مِنْ عِبادِک الصّالِحینَ فَلاتَفْضَحْنى یوْمَ الْقِیمَةِ عَلى رُؤُسِ الاْشْهادِ اِلهى جُودُک بَسَطَ اَمَلى وَعَفْوُک اَفْضَلُ مِنْ عَمَلى اِلهى فَسُرَّنى بِلِقاَّئِک یوْمَ تَقْضى فیهِ بَینَ عِبادِک اِلهى اعْتِذارى اِلَیک اِعْتِذارُ مَنْ لَمْ یسْتَغْنِ عَنْ قَبُولِ عُذْرِهِ فَاقْبَلْ عُذْرى یا اَکرَمَ مَنِ اعْتَذَرَ اِلَیهِ الْمُسیئُونَ اِلهى لا تَرُدَّ حاجَتى وَلا تُخَیبْ طَمَعى وَلا تَقْطَعْ مِنْک رَجاَّئى وَاَمَلى اِلهى لَوْ اَرَدْتَ هَوانى لَمْ تَهْدِنى وَلَوْ اَرَدْتَ فَضیحَتى لَمْ تُعافِنى اِلهى ما اَظُنُّک تَرُدُّنى فى حاجَةٍ قَدْ اَفْنَیتُ عُمْرى فى طَلَبِها مِنْک اِلهى فَلَک الْحَمْدُ اَبَداً اَبَداً داَّئِماً سَرْمَداً یزیدُ وَلا یبیدُ کما تُحِبُّ وَتَرْضى اِلهى اِنْ اَخَذْتَنى بِجُرْمى اَخَذْتُک بِعَفْوِک وَاِنْ اَخَذْتَنى بِذُنُوبى اَخَذْتُک بِمَغْفِرَتِک وَاِنْ اَدْخَلْتَنىِ النّارَ اَعْلَمْتُ اَهْلَها اَنّى اُحِبُّک اِلهى اِنْ کانَ صَغُرَ فى جَنْبِ طاعَتِک عَمَلى فَقَدْ کبُرَ فى جَنْبِ رَجاَّئِک اَمَلى اِلهى کیفَ اَنْقَلِبُ مِنْ عِنْدِک بِالْخَیبَةِ مَحْروماً وَقَدْ کانَ حُسْنُ ظَنّى بِجُودِک اَنْ تَقْلِبَنى بِالنَّجاةِ مَرْحُوماً اِلهى وَقَدْ اَفْنَیتُ عُمْرى فى شِرَّةِ السَّهْوِ عَنْک وَاَبْلَیتُ شَبابى فى سَکرَةِ التَّباعُدِ مِنْک اِلهى فَلَمْ اَسْتَیقِظْ اَیامَ اغْتِرارى بِک وَرُکونى اِلى سَبیلِ سَخَطِک اِلهى وَاَنَا عَبْدُک وَابْنُ عَبْدِک قائِمٌ بَینَ یدَیک مُتَوَسِّلٌ بِکرَمِک اِلَیک اِلهى اَنَا عَبْدٌ اَتَنَصَّلُ اِلَیک مِمَّا کنْتُ اُواجِهُک بِهِ مِنْ قِلَّةِ اسْتِحْیائى مِنْ نَظَرِک وَاَطْلُبُ الْعَفْوَ مِنْک اِذِ الْعَفْوُ نَعْتٌ لِکرَمِک اِلهى لَمْ یکنْ لى حَوْلٌ فَانْتَقِلَ بِهِ عَنْ مَعْصِیتِک اِلاّ فى وَقْتٍ اَیقَظْتَنى لِمَحَبَّتِک وَکما اَرَدْتَ اَنْ اَکونَ کنْتُ فَشَکرْتُک بِاِدْخالى فى کرَمِک وَلِتَطْهیرِ قَلْبى مِنْ اَوْساخِ الْغَفْلَةِ عَنْک اِلهى اُنْظُرْ اِلَىَّ نَظَرَ مَنْ نادَیتَهُ فَاَجابَک وَاْستَعْمَلْتَهُ بِمَعُونَتِک فَاَطاعَک یا قَریبَاً لا یبْعُدُ عَنِ المُغْتَرِّ بِهِ وَیا جَواداً لایبْخَلُ عَمَّنْ رَجا ثَوابَهُ اِلهى هَبْ لى قَلْباً یدْنیهِ مِنْک شَوْقُهُ وَلِساناً یرْفَعُ اِلَیک صِدْقُهُ وَنَظَراً یقَرِّبُهُ مِنْک حَقُّهُ اِلهى إ نَّ مَنْ تَعَرَّفَ بِک غَیرُ مَجْهُولٍ وَمَنْ لاذَ بِک غَیرُ مَخْذُولٍ وَمَنْ اَقْبَلْتَ عَلَیهِ غَیرُ مَمْلُوک اِلهى اِنَّ مَنِ انْتَهَجَ بِک لَمُسْتَنیرٌ وَاِنَّ مَنِ اعْتَصَمَ بِک لَمُسْتَجیرٌ وَقَدْ لُذْتُ بِک یا اِلهى فَلا تُخَیبْ ظَنّى مِنْ رَحْمَتِک وَلا تَحْجُبْنى عَنْ رَاْفَتِک اِلهى اَقِمْنى فى اَهْلِ وِلایتِک مُقامَ مَنْ رَجَا الزِّیادَةَ مِنْ مَحَبَّتِک اِلهى وَاَلْهِمْنى وَلَهاً بِذِکرِک اِلى ذِکرِک وَهِمَّتى فى رَوْحِ نَجاحِ اَسْماَّئِک وَمَحَلِّ قُدْسِک اِلهى بِک عَلَیک اِلاّ اَلْحَقْتَنى بِمَحَلِّ اَهْلِ طاعَتِک وَالْمَثْوَى الصّالِحِ مِنْ مَرْضاتِک فَاِنّى لا اَقْدِرُ لِنَفْسى دَفْعاً وَلا اَمْلِک لَها نَفْعاً اِلهى اَنَا عَبْدُک الضَّعیفُ الْمُذْنِبُ وَمَمْلُوکک الْمُنیبُ فَلا تَجْعَلْنى مِمَّنْ صَرَفْتَ عَنْهُ وَجْهَک وَحَجَبَهُ سَهْوُهُ عَنْ عَفْوِک اِلهى هَبْ لى کمالَ الاِنْقِطاعِ اِلَیک وَاَنِرْ اَبْصارَ قُلُوبِنا بِضِیاَّءِ نَظَرِها اِلَیک حَتّى تَخْرِقَ اَبْصارُ الْقُلوُبِ حُجُبَ النُّورِ فَتَصِلَ اِلى مَعْدِنِ الْعَظَمَةِ وَتَصیرَ اَرْواحُنا مُعَلَّقَةً بِعِزِّ قُدْسِک اِلهى وَاجْعَلْنى مِمَّنْ نادَیتَهُ فَاَجابَک وَلاحَظْتَهُ فَصَعِقَ لِجَلالِک فَناجَیتَهُ سِرّاً وَعَمِلَ لَک جَهْراً اِلهى لَمْ اُسَلِّطْ عَلى حُسْنِ ظَنّى قُنُوطَ الاْیاسِ وَلاَ انْقَطَعَ رَجاَّئى مِنْ جَمیلِ کرَمِک اِلهى اِنْ کانَتِ الْخَطایا قَدْ اَسْقَطَتْنى لَدَیک فَاصْفَحْ عَنّى بِحُسْنِ تَوَکلى عَلَیک اِلهى اِنْ حَطَّتْنِى الذُّنُوبُ مِنْ مَکارِمِ لُطْفِک فَقَدْ نَبَّهَنِى الْیقینُ اِلى کرَمِ عَطْفِک اِلهى اِنْ اَنامَتْنِى الْغَفْلَةُ عَنِ الاِسْتْعِدادِ لِلِقاَّئِک فَقَدْ نَبَّهَنِى الْمَعْرِفَةُ بِکرَمِ آلاَّئِک اِلهى اِنْ دَعانى اِلَى النّارِ عَظیمُ عِقابِک فَقَدْ دَعانى اِلَى الْجَنَّةِ جَزیلُ ثَوابِک اِلهى فَلَک اَسْئَلُ وَاِلَیک اَبْتَهِلُ وَاَرْغَبُ وَاَسْئَلُک اَنْ تُصَلِّىَ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَاَنْ تَجْعَلَنى مِمَّنْ یدیمُ ذِکرَک وَلا وینْقُضُ عَهْدَک وَلایغْفُلُ عَنْ شُکرِک وَلا یسْتَخِفُّ بِاَمْرِک اِلهى وَاَلْحِقْنى بِنُورِ عِزِّک الاْبْهَجِ فَاَکونَ لَک عارِفاً وَعَنْ سِواک مُنْحَرِفاً وَمِنْک خاَّئِفاً مُراقِباً یا ذَاالْجَلالِ وَالاِْکرامِ وَصَلَّى اللّهُ عَلى مُحَمَّدٍ رَسُولِهِ وَ الِهِ الطّاهِرینَ وَسَلَّمَ تَسْلیماً کثیراً 
উক্ত মুনাজাতটি যখন ইচ্ছা পাঠ করা যেতে পারে

১লা শাবান রাতের আমল:

শাবান মাসের প্রথম রাতে ১২ রাকাত নামাজের জন্য তাকদি করা হয়েছে যার প্রথম রাকাতের সূরা হামদের পরে ১১ বার সূরা তৌহিদ পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে।

১লা শাবান দিনের আমল:

রোজা রাখা। ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেনঃ যদি কেউ শাবান মাসের প্রথম দিনে রোজা রাখে তাহলে তাকে বেহেস্ত দান করা হবে আর যদি কেউ ২ দিন রোজা রাখে তাহলে আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি তার প্রতি থাকবে। আর যদি কেউ ৩ দিন রোজা রাখে তাহলে সে বেহেস্তের যিয়ারত করতে পারবে। (আল মুরাকেবাত, পৃষ্ঠা ১৭৭, মাফাতিহুল জেনান, দ্বিতীয় অধ্যায়, শাবান মাসের আমল)

৩রা শাবান: 

উক্ত তারিখে কিছু আমল বর্ণিত হয়েছে যা সম্পাদন করা হচ্ছে মুস্তাহাব। আমল সমূহ হচ্ছে নিন্মরূপ:
– রোজা রাখা।
– যিয়ারতে আশুরা পাঠ করা।
কাসিম বিন আলা হামেদানী ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর উকিল তিনি বলেছেনঃ ইমাম (আ.) বলেছেন: যেহেতু ৩ রা শাবান ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্মদিবস সেহেতু এ দিনে রোজা রাখ এবং নিন্মোক্ত দোয়াটি এই দিনে পাঠ কর:
اَللّهُمَّ اِنّى اَسْئَلُک بِحَقِّ الْمَوْلُودِ فى هذَا الْیوْمِ الْمَوْعُودِ بِشَهادَتِهِ قَبْلَ اْستِهْلالِهِ وَوِلادَتِهِ بَکتْهُ السَّماَّءُ وَمَنْ فیها وَالاْرْضُ وَمَنْ عَلَیها وَلَمّا یطَاْ لابَتَیها قَتیلِ الْعَبْرَةِ وَسَیدِ الاُْسْرَةِ الْمَمْدُودِ بِالنُّصْرَةِ یوْمَ الْکرَّةِ الْمُعَوَّضِ مِنْ قَتْلِهِ اَنَّ الاْئِمَّةَ مِنْ نَسْلِهِ وَالشِّفاَّءَ فى تُرْبَتِهِ والْفَوْزَ مَعَهُ فى اَوْبَتِهِ والاْوصِیاَّءَ مِنْ عِتْرَتِهِ بَعْدَ قاَّئِمِهِمْ وَغَیبَتِهِ حَتّى یدْرِکوا الاْوْتارَ وَیثْاَروُا الثّارَ وَیرْضُوا الْجَبّارَ وَیکونُوا خَیرَ اَنْصارٍ صَلَّى اللّهُ عَلَیهِمْ مَعَ اْختِلافِ اللَّیلِ وَالنَّهارِ اَللّهُمَّ فَبِحَقِّهِمْ اِلَیک اَتَوَسَّلُ وَاَسْئَلُ سُؤالَ مُقْتَرِفٍ مُعْتَرِفٍ مُسیئٍ اِلى نَفْسِهِ مِمَّا فَرَّطَ فى یوْمِهِ وَاَمْسِهِ یسْئَلُک الْعِصْمَةَ اِلى مَحَلِّ رَمْسِهِ اَللّهُمَّ فَصَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعِتْرَتِهِ وَاحْشُرْنا فى زُمْرَتِهِ وَبَوِّئْنا مَعَهُ دارَ الْکرامَةِ وَمَحَلَّ الاِقامَةِ اَللّهُمَّ وَکما اَکرَمْتَنا بِمَعْرِفَتِهِ فَاَکرِمْنا بِزُلْفَتِهِ وَارْزُقْنا مُرافَقَتَهُ وَسابِقَتَهُ وَاجْعَلْنا مِمَّنْ یسَلِّمُ لاِمْرِهِ وَیکثِرُ الصَّلوةَ عَلَیهِ عِنْدَ ذِکرِهِ وَعَلى جَمیعِ اَوْصِیاَّئِهِ وَاَهْلِ اَصْفِیاَّئِهِ الْمَمْدُودین مِنْک بِالْعَدَدِ الاِْثْنَىْ عَشَرَ النُّجُومِ الزُّهَرِ وَالْحُجَجِ عَلى جَمیعِ الْبَشَرِ اَللّهُمَّ وَهَبْ لَنا فى هذَا الْیوْمِ خَیرَ مَوْهِبَةٍ وَاَنْجِحْ لَنا فیهِ کلَّ طَلِبَةٍ کما وَهَبْتَ الْحُسَینَ لِمُحَمَّدٍ جَدِّهِ وَعاذَ فُطْرُسُ بِمَهْدِهِ فَنَحْنُ عائِذُونَ بِقَبْرِهِ مِنْ بَعْدِهِ نَشْهَدُ تُرْبَتَهُ وَننْتَظِرُ اَوْبَتَهُ آمینَ رَبَّ الْعالَمینَ  اَللّهُمَّ اَنْتَ مُتَعالِى الْمَکانِ عَظیمُ الْجَبَرُوتِ شَدیدُ الِمحالِ غَنِىُّ َعنِ الْخَلایقِ عَریضُ الْکبْرِیاَّءِ قادِرٌ عَلى ما تَشاَّءُ قَریبُ الرَّحْمَةِ صادِقُ الْوَعْدِ سابِغُ النِّعْمَةِ حَسَنُ الْبَلاَّءِ قَریبٌ إذا دُعیتَ مُحیطٌ بِما خَلَقْتَ قابِلُ التَّوبَةِ لِمَنْ تابَ اِلَیک قادِرٌ عَلى ما اَرَدْتَ وَمُدْرِک ما طَلَبْتَ وَشَکورٌ اِذا شُکرْتَ وَذَکورٌ اِذا ذُکرْتَ اَدْعُوک مُحْتاجاً وَاَرْغَبُ اِلَیک فَقیراً وَاَفْزَعُ اِلَیک خاَّئِفاً وَاَبْکى اِلَیک مَکرُوباً وَاَسْتَعینُ بِک ضَعیفاً وَاَتوَکلُ عَلَیک کافِیاً اُحْکمْ بَینَنا وَبَینَ قَوْمِنا  [بِالْحَقِّ] فَاِنَّهُمْ غَرُّونا وَ خَدَعُونا وَ خَذَلُونا وَ غَدَرُوا بِنا وَ قَتَلُونا و نَحْنُعِتْرَةُ نَبِیک وَوَُلَْدُ حَبیبِک مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِاللّهِ الَّذِى اصطَفَیتَهُ بِالرِّسالَةِ وَائْتَمَنْتَهُ عَلى وَحْیک فَاجْعَلْ لَنا مِنْ اَمْرِنا فَرَجاً وَمَخْرَجاً بِرَحْمَتِک یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ
উক্ত দোয়াটির পরে এ দোয়াটি পাঠ কর যে দোয়াটি হুসাইন (আ.) তার অন্তিম সময়ে পাঠ করেছিলেন:
اللَّهُمَّ أَنْتَ مُتَعَالِي الْمَكَانِ عَظِيمُ الْجَبَرُوتِ شَدِيدُ الْمِحَالِ غَنِيٌّ عَنِ الْخَلَائِقِ عَرِيضُ الْكِبْرِيَاءِ قَادِرٌ عَلَى مَا تَشَاءُ قَرِيبُ الرَّحْمَةِ صَادِقُ الْوَعْدِ سَابِغُ النِّعْمَةِ حَسَنُ الْبَلَاءِ قَرِيبٌ إِذَا دُعِيتَ مُحِيطٌ بِمَا خَلَقْتَ قَابِلُ التَّوْبَةِ لِمَنْ تَابَ إِلَيْكَ قَادِرٌ عَلَى مَا أَرَدْتَ وَ مُدْرِكٌ مَا طَلَبْتَ وَ شَكُورٌ إِذَا شُكِرْتَ وَ ذَكُورٌ إِذَا ذُكِرْتَ أَدْعُوكَ مُحْتَاجاً وَ أَرْغَبُ إِلَيْكَ فَقِيراً وَ أَفْزَعُ إِلَيْكَ خَائِفاً وَ أَبْكِي إِلَيْكَ مَكْرُوباً وَ أَسْتَعِينُ بِكَ ضَعِيفاً وَ أَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ كَافِياً احْكُمْ بَيْنَنَا وَ بَيْنَ قَوْمِنَا [بِالْحَقِ‏] فَإِنَّهُمْ غَرُّونَا وَ خَدَعُونَا وَ خَذَلُونَا وَ غَدَرُوا بِنَا وَ قَتَلُونَا وَ نَحْنُ عِتْرَةُ نَبِيِّكَ وَ وَلَدُ [وُلْدُ] حَبِيبِكَ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الَّذِي اصْطَفَيْتَهُ بِالرِّسَالَةِ وَ ائْتَمَنْتَهُ عَلَى وَحْيِكَ فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا فَرَجاً وَ مَخْرَجاً بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
ইবনে আব্বস বলেনঃ ইমাম সাদিক্ব (আ.) ৩রা শাবান ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্মদিনে এ দোয়াটি পাঠ করতেন।

১৩ই শাবান:

রজব, শাবান এবং রমজান মাসের ১৩ তারিখকে “আইয়ামে বাইযা”  বলা হয়ে থাকে। উক্ত তারিখের রাতে ২ রাকাত নামাজ পাঠ করতে হবে। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সুরা ইয়াসিন, মুলক এবং ইখলাস পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনরূপভাবে পাঠ করতে হবে।

১৫ই শাবান রাতের আমল:

এই তারিখে রাত্রি জাগরণের জন্য তাকিদ করা হয়েছে। এ রাতের বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্মদিবস।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেনঃ ইমাম বাকের (আ.) কে উক্ত রাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ ১৫ই শাবানের রাত হচ্ছে শবে ক্বদরের পরে সবচেয়ে ফযিলতপূর্ণ রাত। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর অপার দয়ায় তাঁর বান্দাদেরকে দান করেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করেন সুতরাং তোমরা উক্ত রাতে এমনভাবে চাও যেন তোমাদের দোয়া কবুল হয়।
যদি কেউ এ রাতে অবৈধ কিছু না চায় তাহলে আল্লাহ তার দোয়া সমূহকে কবুল করেন।
এ রাত হচ্ছে এমন এক রাত যা আল্লাহ তার বান্দাদেরকে দান করেছেন। উক্ত রাতটি হচ্ছে শবে ক্বদরের ন্যায় ফযিলতপূর্ণ একটি রাত সূতরাং তোমরা এ রাতে আল্লাহর ইবাদত কর এবং নিজেদের জন্য দোয়া চাও। উক্ত রাতে বিশেষ কিছু আমল বর্ণিত হয়েছে যেমন:
– গোসল করা, উক্ত রাতে গোসল করলে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহকে ক্ষমা করে দেন।
– রাত্রি জাগরণ, উক্ত রাতে নামাজ, দোয়া এবং ইস্তিগফারের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উত্তম। কেননা ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি এ রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে তাহলে কেয়ামতে যেদিন সকলের অন্তর মারা যাবে সেদিনও অন্তর চীরন্জিবী থাকবে।
– ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত পাঠ করা যে ব্যাক্তি এ রাতে যিয়ারতে ইমাম হুসাইন পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহকে মাফ করে দিবেন।
– দোয়া পাঠ করা। নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করলে ইমাম মাহদী (আ.) এর যিয়ারতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে।
اَللّهُمَّ بِحَقِّ لَیلَتِنا [هذِهِ] وَمَوْلُودِها وَحُجَّتِک وَمَوْعُودِهَا الَّتى قَرَنْتَ اِلى فَضْلِها فَضْلاً فَتَمَّتْ کلِمَتُک صِدْقاً وَعَدْلاً لا مُبَدِّلَ لِکلِماتِک وَلا مُعَقِّبَ لاِیاتِک نُورُک الْمُتَاَلِّقُ وَضِیاَّؤُک الْمُشْرِقُ وَالْعَلَمُ النُّورُ فى طَخْیاَّءِ الدَّیجُورِ الْغائِبُ الْمَسْتُورُ جَلَّ مَوْلِدُهُ وَکرُمَ مَحْتِدُهُ وَالْمَلاَّئِکةُ شُهَّدُهُ وَاللّهُ ن اصِرُهُ وَمُؤَیدُهُ اِذا آنَ میعادُهُ وَالْمَلاَّئِکةُ اَمْد ادُهُ سَیفُ اللّهِ الَّذى لا ینْبوُ وَنُورُهُ الَّذى لا یخْبوُ وَ ذوُالْحِلْمِ الَّذى لا یصْبوُا مَدارُ الَّدهْرِ وَنَوامیسُ الْعَصْرِ وَوُلاةُ الاْمْرِ وَالْمُنَزَّلُ عَلَیهِمْ ما یتَنَزَّلُ فى لَیلَةِ الْقَدْرِ وَاَصْحابُ الْحَشْرِ وَالنَّشْرِ تَراجِمَةُ وَحْیهِ وَوُلاةُ اَمْرِهِ وَنَهْیهِ اَللّهُمَّ فَصَلِّ عَلى خاتِمِهْم وَقآئِمِهِمُ الْمَسْتُورِ عَنْ عَوالِمِهِمْ اَللّهُمَّ وَاَدْرِک بِنا اءَیامَهُ وَظُهُورَهُ وَقِیامَهُ وَاجْعَلْنا مِنْ اَنْصارِهِ وَاقْرِنْ ثارَنا بِثارِهِ وَاکتُبْنا فى اَعْوانِهِ وَخُلَصاَّئِهِ وَاَحْینا فى دَوْلَتِهِ ناعِمینَ وَبِصُحْبَتِهِ غانِمینَ وَبِحَقِّهِ قآئِمینَ وَمِنَ السُّوَّءِ سالِمینَ یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ وَالْحَمْدُلِلّهِ رَبِّ الْعالَمینَ وَصَلَواتُهُ عَلى سَیدِنا مُحَمَّدٍ خاتَمِ النَّبِیینَ وَالْمُرْسَلینَ وَعَلى اَهْلِ بَیتِهِ الصّادِقینَ وَعِتْرَتِهَ النّاطِقینَ وَالْعَنْ جَمیعَ الظّالِمینَ واحْکمْ بَینَنا وَبَینَهُمْ یا اَحْکمَ الْحاکمینَ 
ইসমাইল বিন ফাযল হাশেমী বলেনঃ ইমাম সাদিক্ব (আ.) আমাকে উক্ত দোয়াটির শিক্ষা দেন এবং আমিও ১৫ই শাবানে উক্ত দোয়াটি পাঠ করি। 
اَللّهُمَّ اَنْتَ الْحَىُّ الْقَیومُ الْعَلِىُّ الْعَظیمُ الْخالِقُ الرّازِقُ الْمُحْیى الْمُمیتُ الْبَدىَّءُ الْبَدیعُ لَک الْجَلالُ وَلَک الْفَضْلُ وَلَک الْحَمْدُ وَلَک الْمَنُّ وَلَک الْجُودُ وَلَک الْکرَمُ وَلَک الاْمْرُ وَلَک الْمَجْدُ وَلَک الْشُّکرُ وَحْدَک لا شَریک لَک یا واحِدُ یا اَحَدُ یا صَمَدُ یا مَنْ لَمْ یلِدْ وَلَمْ یولَدْ وَلَمْ یکنْ لَهُ کفُواً اَحَدٌ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَاْغفِرْلى وَارْحَمْنى وَاکفِنى ما اَهَمَّنى وَاقْضِ دَینى وَوَسِّعْ عَلَىَّ فى رِزْقى فَاِنَّک فى هذِهِ اللَّیلَةِ کلَّ اَمْرٍ حَکیمٍ تَفْرُقُ وَمَنْ تَشاَّءُ مِنْ خَلْقِک تَرْزُقُ فَارْزُقْنى وَاَنْتَ خَیرُ الرّازِقینَ فَاِنَّک قُلْتَ وَاَنْتَ خَیرُ الْقاَّئِلینَ النّاطِقینَ وَاسْئَلوُا اللّهَ مِنْ فَضْلِهِ فَمِنْ فَضْلِک اَسْئَلُ وَاِیاک قَصَدْتُ وَابْنِ نَبِیک اعْتَمَدْتُ وَلَک رَجَوْتُ فَارْحَمْنى یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ 
হজরত মোহাম্মাদ (সা.) উক্ত রাতে এ দোয়াটি পাঠ করতেন:
اَللّهُمَّ اقْسِمْ لَنا مِنْ خَشْیتِک ما یحُولُ بَینَنا وَبَینَ مَعْصِیتِک وَمِنْ طاعَتِک ما تُبَلِّغُنا بِهِ رِضْوانَک وَمِنَ الْیقینِ ما یهُونُ عَلَینا بِهِ مُصیباتُ الدُّنْیا اَللّهُمَّ اَمْتِعْنا بِاَسْماعِنا وَاَبْصارِنا وَقُوَّتِنا ما اَحْییتَنا وَاجْعَلْهُ الْوارِثَ مِنّا وَاجْعَلْ ثارَنا عَلى مَنْ ظَلَمَنا وَانْصُرنا عَلى مَنْ عادانا وَلا تَجْعَلْ مُصیبَتَنا فى دینِنا وَلا تَجْعَلِ الدُّنْیا اَکبَرَ هَمِّنا وَلا مَبْلَغَ عِلْمِنا وَلا تُسَلِّطْ عَلَینا مَنْ لا یرْحَمُنا بِرَحْمَتِک یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ 
– ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এর সালাওয়াত পাঠ করা:
সারা শাবান মাসে যাওয়ালের সময় এবং বিশেষ করে ১৫ই শাবানের রাতে উক্ত সালাওয়াতটি পাঠ করার অনেক ফযিলত রয়েছে।
للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَ مَوْضِعِ الرِّسَالَةِ وَ مُخْتَلَفِ الْمَلائِكَةِ وَ مَعْدِنِ الْعِلْمِ وَ أَهْلِ بَيْتِ الْوَحْيِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ الْفُلْكِ الْجَارِيَةِ فِي اللُّجَجِ الْغَامِرَةِ يَأْمَنُ مَنْ رَكِبَهَا وَ يَغْرَقُ مَنْ تَرَكَهَا الْمُتَقَدِّمُ لَهُمْ مَارِقٌ وَ الْمُتَأَخِّرُ عَنْهُمْ زَاهِقٌ وَ اللازِمُ لَهُمْ لاحِقٌ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ الْكَهْفِ الْحَصِينِ وَ غِيَاثِ الْمُضْطَرِّ الْمُسْتَكِينِ وَ مَلْجَإِ الْهَارِبِينَ وَ عِصْمَةِ الْمُعْتَصِمِينَ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ صَلاةً كَثِيرَةً تَكُونُ لَهُمْ رِضًى وَ لِحَقِّ مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ أَدَاءً وَ قَضَاءً بِحَوْلٍ مِنْكَ وَ قُوَّةٍ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ الطَّيِّبِينَ الْأَبْرَارِ الْأَخْيَارِ الَّذِينَ أَوْجَبْتَ حُقُوقَهُمْ وَ فَرَضْتَ طَاعَتَهُمْ وَ وِلايَتَهُمْ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ اعْمُرْ قَلْبِي بِطَاعَتِكَ وَ لا تُخْزِنِي بِمَعْصِيَتِكَ وَ ارْزُقْنِي مُوَاسَاةَ مَنْ قَتَّرْتَ عَلَيْهِ مِنْ رِزْقِكَ، ،بِمَا وَسَّعْتَ عَلَيَّ مِنْ فَضْلِكَ وَ نَشَرْتَ عَلَيَّ مِنْ عَدْلِكَ وَ أَحْيَيْتَنِي تَحْتَ ظِلِّكَ وَ هَذَا شَهْرُ نَبِيِّكَ سَيِّدِ رُسُلِكَ شَعْبَانُ الَّذِي حَفَفْتَهُ مِنْكَ بِالرَّحْمَةِ وَ الرِّضْوَانِ الَّذِي كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ آلِهِ وَ [سَلَّمَ‏] يَدْأَبُ فِي صِيَامِهِ وَ قِيَامِهِ فِي لَيَالِيهِ وَ أَيَّامِهِ بُخُوعا لَكَ فِي إِكْرَامِهِ وَ إِعْظَامِهِ إِلَى مَحَلِّ حِمَامِهِ اللَّهُمَّ فَأَعِنَّا عَلَى الاسْتِنَانِ بِسُنَّتِهِ فِيهِ وَ نَيْلِ الشَّفَاعَةِ لَدَيْهِ اللَّهُمَّ وَ اجْعَلْهُ لِي شَفِيعا مُشَفَّعا وَ طَرِيقا إِلَيْكَ مَهْيَعا وَ اجْعَلْنِي لَهُ مُتَّبِعا حَتَّى أَلْقَاكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَنِّي رَاضِيا وَ عَنْ ذُنُوبِي غَاضِيا قَدْ أَوْجَبْتَ لِي مِنْكَ الرَّحْمَةَ وَ الرِّضْوَانَ وَ أَنْزَلْتَنِي دَارَ الْقَرَارِ وَ مَحَلَّ الْأَخْيَارِ
– তসবিহ পাঠ করা:
সুবহান আল্লাহ – ১০০ বার।
আল হামদু লিল্লাহ- ১০০ বার।
আল্লাহু আকবার – ১০০ বার।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – ১০০ বার।
উক্ত তসবীহ পাঠ করলে আল্লাহ তার পূর্বে কৃত গুনাহ সমূহকে মাফ করে দিবেন এবং তার দোয়াকে কবুল করবেন।
– নামাজ:
আবু ইয়াহিয়া ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) কে জিজ্ঞাসা করে এ রাতের সবচেয়ে উত্তম আমল কি? তিনি বলেন এশার নামাজের পরে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। প্রথম রাকাতে সূরা হামদের পরে সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা হামদের পরে সূরা তৌহিদ পাঠ করার মাধ্যমে নামাজকে শেষ করবে। তারপরে ৩৩ বার সুবহান আল্লাহ, ৩৩ বার আল হামদুল্লিাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার তারপর বলবে:
یا مَنْ اِلَیهِ مَلْجَاءُ الْعِبادِ فِى الْمُهِمّاتِ وَاِلَیهِ یفْزَعُ الْخَلْقُ فىِ الْمُلِمّاتِ یا عالِمَ الْجَهْرِ وَالْخَفِیاتِ وَ یا مَنْ لا تَخْفى عَلَیهِ خَواطِرُ الاْوْهامِ وَتَصَرُّفُ الْخَطَراتِ یا رَبَّ الْخَلایقِ وَالْبَرِیاتِ یا مَنْ بِیدِهِ مَلَکوتُ الاْرَضینَ وَالسَّمواتِ اَنْتَ اللّهُ لا اِلهَ اِلاّ اَنْتَ اَمُتُّ اِلَیک بِلا اِلهَ اِلاّ اَنْتَ فَیا لا اِلهَ اِلاّ اَنْتَ اجْعَلْنى فى هِذِهِ اللَّیلَةِ مِمَّنْ نَظَرْتَ اِلَیهِ فَرَحِمْتَهُ وَسَمِعْتَ دُعاَّئَهُ فَاَجَبْتَهُ وَعَلِمْتَ اسْتِقالَتَهُ فَاَقَلْتَهُ وَتَجاوَزْتَ عَنْ سالِفِ خَطیئَتِهِ وَعَظیمِ جَریرَتِهِ فَقَدِ اسْتَجَرْتُ بِک مِنْ ذُنُوبى وَلَجَاْتُ اِلَیک فى سَتْرِ عُیوبى اَللّهُمَّ فَجُدْ عَلَىَّ بِکرَمِک وَفَضْلِک وَاحْطُطْ خَطایاىَ بِحِلْمِک وَعَفْوِک وَتَغَمَّدْنى فى هذِهِ اللَّیلَةِ بِسابِغِ کرامَتِک وَاجْعَلْنى فیها مِنْ اَوْلِیاَّئِک الَّذینَ اجْتَبَیتَهُمْ لِطاعَتِک وَاخْتَرْتَهُمْ لِعِبادَتِک وَجَعَلْتَهُمْ خالِصَتَک وَصِفْوَتَک اَللّهُمَّ اجْعَلْنى مِمَّنْ سَعَدَ جَدُّهُ وَتَوَفَّرَ مِنَ الْخَیراتِ حَظُّهُ وَاجْعَلْنى مِمَّنْ سَلِمَ فَنَعِمَ وَفازَ فَغَنِمَ وَاکفِنى شَرَّ ما اَسْلَفْتُ وَاعْصِمْنى مِنَ الاِْزدِیادِ فى مَعْصِیتک وَحَبِّبْ اِلَىَّ طاعَتَک وَما یقَرِّبُنى مِنْک وَیزْلِفُنى عِنْدَک سَیدى اِلَیک یلْجَاءُ الْهارِبُ وَمِنْک یلْتَمِسُ الطّالِبُ وَعَلى کرَمِک یعَوِّلُ الْمُسْتَقیلُ التّائِبُ اَدَّبْتَ عِبادَک بالتَّکرُّمِ وَاَنْتَ اَکرَمُ الاْکرَمینَ وَاَمَرْتَ بِالْعَفْوِ عِبادَک وَاَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحیمُ اَللّهُمَّ فَلا تَحْرِمْنى ما رَجَوْتُ مِنْ کرَمِک وَلا تُؤْیسْنى مِنْ سابِغِ نِعَمِک وَلا تُخَیبْنى مِنْ جَزیلِ قِسَمِک فى هذِهِ اللَّیلَةِ لاِهْلِ طاعَتِک وَاجْعَلْنى فى جُنَّةٍ مِنْ شِرارِ بَرِیتِک رَبِّ اِنْ لَمْ اَکنْ مِنْ اَهْلِ ذلِک فَاَنْتَ اَهْلُ الْکرَمِ وَالْعَفْوِ وَالْمَغْفِرَةِ وَجُدْ عَلَىَّ بِما اَنْتَ اَهْلُهُ لا بِما اَسْتَحِقُّهُ فَقَدْ حَسُنَ ظَنّى بِک وَتَحَقَّقَ رَجاَّئى لَک وَعَلِقَتْ نَفْسى بِکرَمِک فَاَنْتَ اَرْحَمُ الرّاحِمینَ وَاَکرَمُ الاْکرَمینَ اَللّهُمَّ وَاخْصُصْنى مِنْ کرَمِک بِجَزیلِ قِسَمِک وَاَعُوذُ بِعَفْوِک مِنْ عُقُوبَتِک وَاغْفِر لِىَ الَّذنْبَ الَّذى یحْبِسُ عَلَىَّ الْخُلُقَ وَیضَیقُ عَلىَّ الرِّزْقَ حَتّى اَقُومَ بِصالِحِ رِضاک وَاَنْعَمَ بِجَزیلِ عَطاَّئِک وَاَسْعَدَ بِسابِغِ نَعْماَّئِک فَقَدْ لُذْتُ بِحَرَمِک وَتَعَرَّضْتُ لِکرَمِک وَاسْتَعَذْتُ بِعَفْوِک مِنْ عُقُوبَتِک وَبِحِلْمِک مِنْ غَضَبِک فَجُدْ بِما سَئَلْتُک وَاَنِلْ مَا الْتَمَسْتُ مِنْک اَسْئَلُک بِک لا بِشَىءٍ هُوَ اَعْظَمُ مِنْک 
অতঃপর সিজদাতে যেয়ে
২০ বার বলতে হবে  (یا رَبِّ)
৭ বার বলতে হবে  (یا اَللّهُ)
৭ বার বলতে হবে (لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ اِلاّ بِاللّهِ)
৭ বার বলতে হবে ( ما شآءَ اللّهُ ده مرتبه لا قُوّةَ اِلاّ بِاللّهِ)
১০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
অতঃপর দোয়া চাইতে হবে।  যদি বান্দাদের চাওয়া বৃষ্টির ফোটার ন্যায় অগুণিত হয় তাহলে আল্লাহ তা কবুল করবেন।


এছাড়াও উক্ত রাতে আরেকটি নামাজ বর্ণিত হয়েছে। নামাজটি হচ্ছে ৪ রাকাত। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে ১০০ বার সুরা ইখলাস।  দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে। নামাজান্তে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করা উত্তম:
اللَّهُمَّ إِنِّی إِلَیْكَ فَقِیرٌ وَ مِنْ عَذَابِكَ خَائِفٌ مُسْتَجِیرٌ اللَّهُمَّ لا تُبَدِّلْ اسْمِی وَ لا تُغَیِّرْ جِسْمِی وَ لا تَجْهَدْ بَلائِی وَ لا تُشْمِتْ بِی أَعْدَائِی أَعُوذُ بِعَفْوِكَ مِنْ عِقَابِكَ وَ أَعُوذُ بِرَحْمَتِكَ مِنْ عَذَابِكَ وَ أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنْكَ جَلَّ ثَنَاؤُكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَیْتَ عَلَى نَفْسِكَ وَ فَوْقَ مَا یَقُولُ الْقَائِلُونَ.
উক্ত রাতে নিন্মে উল্লেখিত যিকর সমূহ পাঠ করলে আল্লাহ তার গুনাহ সমূহকে ক্ষমা করে দিবেন এবং দোয়া সমূহকে কবুল করবেন।
– সুবহান আল্লাহ – ১০০ বার।
– আল হামদু লিল্লাহ- ১০০ বার।
– আল্লাহু আকবার – ১০০ বার।
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – ১০০ বার।
উক্ত রাতে আরো একটি নামাজ বর্ণিত হয়েছে। নামাজটি হচ্ছে ১০ রাকাত। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে। নামাজান্তে সিজদাতে যেয়ে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হবে:
اَللّهُمَّ لَکَ سَجَدَ سَوادِی و خَیالی و بَیاضی یا عظیمَ کُلِّ عَظیمِ. اغْفِرْلِیَ الذَّنْبَ الْعَظیمُ فَإِنَّهُ لا یَغْفِرُهُ غَیْرُکَ یا عظیمَ.
– উক্ত রাতে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করা হচ্ছে উত্তম:
اِلهى تَعَرَّضَ لَک فى هذَا اللَّیلِ الْمُتَعَرِّضُونَ وَقَصَدَک الْقاصِدُونَ وَاَمَّلَ فَضْلَک وَمَعْرُوفَک الطّالِبُونَ وَلَک فى هذَا اللّیلِ نَفَحاتٌ وَجَواَّئِزُ وَعَطایا وَمَواهِبُ تَمُنُّ بِها عَلى مَنْ تَشاَّءُ مِنْ عِبادِک وَتَمْنَعُها مَنْ لَمْ تَسْبِقْ لَهُ الْعِنایةُ مِنْک وَها اَنَا ذا عُبَیدُک الْفَقیرُ اِلَیک الْمُؤَمِّلُ فَضْلَک وَمَعْرُوفَک فَاِنْ کنْتَ یا مَولاىَ تَفَضَّلْتَ فى هذِهِ اللَّیلَةِ عَلى اَحَدٍ مِنْ خَلْقِک وَعُدْتَ عَلَیهِ بِعائِدَةٍ مِنْ عَطْفِک فَصَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ الطَّیبینَ الطّاهِرینَ الْخَیرینَ الْفاضِلینَ وَجُدْ عَلَىَّ بِطَولِک وَمَعْرُوفِک یا رَبَّ الْعالَمینَ وَصَلَّى اللّهُ عَلى مُحَمَّدٍخاتَمِ النَّبیینَ وَ الِهِ الطّاهِرینَ وَسَلَّمَ تَسْلیماً اِنَّ اللّهَ حَمیدٌ مَجیدٌ اَللّهُمَّ اِنّى اَدْعُوک کما اَمَرْتَ فَاسْتَجِبْ لى کما وَعَدْتَ اِنَّک لا تُخْلِفُ الْمیعادَ 

উক্ত দোয়াটি সুবহে সাদিকের আগে নামাজে শাফ এর পূর্বে পাঠ করা হয়ে থাকে।
– সিজদা এবং দোয়া:
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: ১৫ই শাবান রাতে রাসুল (সা.) সিজদাতে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন:
سَجَدَ لَک سَوادى وَخَیالى وَآمَنَ بِک فؤ ادى هذِهِ یداىَ وَماجَنَیتُهُ عَلى نَفْسى یا عَظیمُ [عَظیماً] تُرْجى لِکلِّ عَظیمٍ اِغْفِرْ لِىَ الْعَظیمَ فَاِنَّهُ لایغْفِرُ الذَّنْبَ الْعَظیمَ اِلا الرَّبُّ الْعَظیمُ 

তারপর তিনি নিজের দুই গালকে মাটির সাথে লাগিয়ে বলতেন:

‏ عَفَّرْتُ وَجْهِي فِي التُّرَابِ وَ حُقَّ لِي أَنْ أَسْجُدَ لَكَ

–      নামাজে জাফরে তাইয়ার পাঠ করা।
– দোয়ায়ে কুমাইল পাঠ করা:
 ইমাম আলী (আ.) থেকে বর্ণিত দোয়া কুমাইল পাঠ করার অনেক ফযিলত রয়েছে। ইমাম আলী (আ.) উক্ত দোয়াটি সিজদাতে পাঠ করেতেন।
ইমাম আলী (আ.) বলেন: এই রাতে সকল বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। এ রাতে হজরত খিযির (আ.) এর দোয়া পাঠ করলে তার দোয়া কবুল হয়। (আল মোরাকেবাত, পৃষ্ঠা ১৯২)

ইমাম মাহদি (আ.) এর সমিপে “আরিজা”

بسْمِ اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحيمِ
كَتَبْتُ يا مَوْلايَ صَلَواتُ اللَّهِ عَلَيْكَ مُسْتَغيثاً، وَشَكَوْتُ ما نَزَلَ بي مُسْتَجيراً بِاللَّهِ‏عَزَّوَجَلَّ، ثُمَّ بِكَ مِنْ أَمْرٍ قَدْ دَهَمَني، وَأَشْغَلَ قَلْبي، وَأَطالَ فِكْري، وَسَلَبَني بَعْضَ‏لُبّي، وَغَيَّرَ خَطيرَ نِعْمَةِ اللَّهِ عِنْدي، أَسْلَمَني عِنْدَ تَخَيُّلِ وُرُودِهِ الْخَليلُ، وَتَبَرَّأَ مِنّي‏عِنْدَ تَرائي إِقْبالِهِ إِلَيَّ الْحَميمُ، وَعَجَزَتْ عَنْ دِفاعِهِ حيلَتي، وَخانَني في تَحَمُّلِهِ‏صَبْري وَقُوَّتي. فَلَجَأْتُ فيهِ إِلَيْكَ، وَتَوَكَّلْتُ فِي الْمَسْأَلَةِ للَّهِ جَلَّ ثَناؤُهُ عَلَيْهِ وَعَلَيْكَ في دِفاعِهِ‏عَنّي، عِلْماً بِمَكانِكَ مِنَ اللَّهِ رَبِّ الْعالَمينَ، وَلِيِّ التَّدْبيرِ وَمالِكِ الْاُمُورِ، وَاثِقاً بِكَ فِي‏الْمُسارَعَةِ فِي الشَّفاعَةِ إِلَيْهِ جَلَّ ثَناؤُهُ في أَمْري، مُتَيَقِّناً لِإِجابَتِهِ تَبارَكَ وَتَعالى إِيَّاكَ‏ بِإِعْطائي سُؤْلي .وَأَنْتَ يا مَوْلايَ جَديرٌ بِتَحْقيقِ ظَنّي وَتَصْديقِ أَمَلي فيكَ في أَمْرِ كَذا وَكَذا
নিন্মে নিচের চাহিদাগুলোকে লিখতে হবে:
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………
فيما لا طاقَةَ لي بِحَمْلِهِ، وَلا صَبْرَ لي عَلَيْهِ، وَإِنْ كُنْتُ‏مُسْتَحِقّاً لَهُ وَلِأَضْعافِهِ بِقَبيحِ أَفْعالي وَتَفْريطي فِي الْواجِباتِ الَّتي للَّهِ عَزَّوَجَلَّ،فَأَغِثْني يا مَوْلايَ صَلَواتُ اللَّهِ عَلَيْكَ عِنْدَ اللَّهْفِ، وَقَدِّمِ الْمَسْأَلَةَ للَّهِ عَزَّوَجَلَّ في‏أَمْري، قَبْلَ حُلُولِ التَّلَفِ، وَشَماتَةِ الْأَعْداءِ، فَبِكَ بُسِطَتِ النِّعْمَةُ عَلَيَّ.
وَاسْأَلِ اللَّهَ جَلَّ جَلالُهُ لي نَصْراً عَزيزاً، وَفَتْحاً قَريباً، فيهِ بُلُوغُ الْآمالِ، وَخَيْرُالْمَبادي، وَخَواتيمُ الْأَعْمالِ، وَالْأَمْنُ مِنَ الْمَخاوِفِ كُلِّها في كُلِّ حالٍ، إِنَّهُ جَلَّ ثَناؤُهُ‏لِما يَشاءُ فَعَّالٌ، وَهُوَ حَسْبي وَنِعْمَ الْوَكيلُ فِي الْمَبْدَءِ وَالْمَآلِ.
উক্ত আরিজাটিকে কোন প্রবাহিত পানি, কুয়া অথবা কোন স্থায়ি পানিতে ডুবিয়ে দিতে হবে। আরিজাটি ডুবানোর পূর্বে বলতে হবে:
يا حسين بن روح، سَلامٌ عَلَيْكَ، أَشْهَدُ أَنَّ وَفاتَكَ في سَبيلِ اللَّهِ، وَأَنَّكَ حَيٌّ عِنْدَ اللَّهِ‏مَرْزُوقٌ، وَقَدْ خاطَبْتُكَ في حَياتِكَ الَّتي لَكَ عِنْدَاللَّهِ جَلَّ وَعَزَّ وَهذِهِ رُقْعَتي وَحاجَتي‏إِلى مَوْلانا عَلَيْهِ السَّلامُ، فَسَلِّمْها إِلَيْهِ، فَأَنْتَ الثِّقَةُ الْأَمينُ.

১৫ই শাবান দিনের আমল:

উক্ত দিনে ইমাম মাহদি (আ.) এর যিয়ারত পাঠ করা উত্তম। যে যিয়ারতটি সামেরাতে ইমাম মাহদি (আ.) এর জন্য পাঠ করা হয়ে থাকে।

শাবান মাসের শেষ দিনগুলো আমল সমূহ:

ইমাম রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত এ মাসের শেষের দিনগুলোতে উক্ত দোয়াটি বেশি পাঠ কর।
اللَّهُمَّ أن لَم يکُن غَفَرتَ لَنَا فيي مَا مَضَي مِن شَعبَانَ فَاغفِر لَنَا فِيمَا بَقِي مِنه
শাবান মাসের শেষের তিন দিন রোজা রাখা উত্তম। ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: যদি কেউ শাবান মাসের শেষের দিনগুলোর সাথে রমজানের রোজাকে মিলিয়ে দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে দুই মাসের রোজার সওয়াব দান করবেন।
শাবান মাসের শেষ তারিখ এবং রমজান মাসের প্রথম তারিখে উক্ত দোয়া পাঠ করা উত্তম:
اَللّهُمَّ اِنَّ هذَا الشَّهْرَ الْمُبارَک الَّذى اُنْزِلَ فیهِ الْقُرآنُ وَ جُعِلَ هُدىً لِلنّاسِ وَ بَیناتٍ مِنَ الْهُدى وَالْفُرْقانِ قَدْ حَضَرَ فَسَلِّمْنا فیهِ وَ سَلِّمْهُ لَنا وَ تَسَلَّمْهُ مِنّا فى یسْرٍ مِنْک وَ عافِیةٍ یا مَنْ اَخَذَ الْقَلیلَ وَ شَکرَ الْکثیرَ اِقْبَلْ مِنِّى الْیسیرَ اَللّهُمَّ اِنّى اَسْئَلُک اَنْ تَجْعَلَ لى اِلى کلِّ خَیرٍ سَبیلاً وَ مِنْ کلِّ ما لا تُحِبُّ مانِعاً یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ یا مَنْ عَفا عَنّى وَ عَمّا خَلَوْتُ بِهِ مِنَ السَّیئاتِ یا مَنْ لَمْ یؤاخِذْنى بِارْتِکابِ الْمَعاصى عَفْوَک عَفْوَک عَفْوَک یاکریمُ اِلهى وَ عَظْتَنى فَلَمْ اَتَّعِظْ وَ زَجَرْتَنى عَنْ مَحارِمِک فلَمْ اَنْزَجِرْ فَما عُذْرى فَاعْفُ عَنّى یا کریمُ عَفْوَک عَفْوَک اَللّهُمَّ اِنّى اَسْئَلُک الرّاحَةَ عِنْدَ الْمَوْتِ وَالْعَفْوَ عِنْدَ الْحِسابِ عَظُمَ الذَّنْبُ مِنْ عَبدِک فَلْیحْسُنِ التَّجاوُزُ مِنْ عِنْدِک یااَهْلَ التَّقْوى وَ یا اَهْلَ الْمَغْفِرَةِ عَفْوَک عَفْوَک اَللّهُمَّ اِنّى عَبْدُک بْنُ عَبْدِک بْنُ اَمَتِک ضَعیفٌ فَقیرٌ اِلى رَحْمَتِک وَ اَنْتَ مُنْزِلُ الْغِنى والْبَرَکةِ عَلَى الْعِبادِ قاهِرٌ مُقْتَدِرٌ اَحْصَیتَ اَعمالَهُمْ وَ قَسَمْتَ اَرْزاقَهُمْ وَ جَعَلْتَهُمْ مُخْتَلِفَةً اَلْسِنَتُهُمْ وَ اَلْوانُهُمْ خَلْقاً مِنْ بَعْدِ خَلْقٍ وَ لا یعْلَمُ الْعِبادُ عِلْمَک وَ لا یقْدِرُ الْعِبادُ قَدْرَک وَکلُّنا فَقیرٌ اِلى رَحْمَتِک فَلا تَصْرِفْ عَنّى وَجْهَک وَاجْعَلْنى مِنْ صالِحى خَلْقِک فِى الْعَمَلِ وَالاْمَلِ وَالْقَضاَّءِ وَالْقَدَرِ اَللّهُمَّ اَبْقِنى خَیرَ الْبَقاَّءِ وَ اَفْنِنى خَیرَ الْفَناَّءِ عَلى مُوالاةِ اَوْلِیاَّئِک وَ مُعاداةِ اَعْداَّئِک وَ الرَّغْبَةِ اِلَیک وَ الرَّهْبَةِ مِنْک وَالْخُشُوعِ وَالْوَفاءِ وَالتَّسْلیمِ لَک وَالتَّصْدیقِ بِکتابِک وَاتِّباعِ سُنَّةِ رَسُولِک اَللّهُمَّ ما کانَ فى قَلْبى مِنْ شَک اَوْ رَیبَةٍ اَوْ جُحُودٍ اَوْ قُنُوطٍ اَوْ فَرَحٍ اَوْ بَذَخٍ اَوْ بَطَرٍ اَوْ خُیلاَّءَ اَوْ رِیاَّءٍ اَوْ سُمْعَةٍ اَوْ شِقاقٍ اَوْ نِفاقٍ اَوْ کفْرٍ اَوْ فُسُوقٍ اَوْ عِصْیانٍ اَوْ عَظَمَةٍ اَوْ شَىءٍ لا تُحِبُّ فَاَسْئَلُک یا رَبِّ اَنْ تُبَدِّلَنى مَکانَهُ ایماناً بِوَعْدِک وَ وَفآءً بِعَهْدِک وَ رِضاً بِقَضاَّئِک وَ زُهْداً فِى الدُّنْیا وَ رَغْبَةً فیما عِنْدَک وَ اَثَرَةً وَ طُمَاْنینَةً وَ تَوْبَةً نَصُوحاً اَسْئَلُک ذلِک یا رَبَّ الْعالَمینَ اِلهى اَنْتَ مِنْ حِلْمِک تُعْصى وَ مِنْ کرَمِک وَ جُودِک تُطاعُ فَکانَّک لَمْ تُعْصَ وَ اَنَا وَ مَنْ لَمْ یعْصِک سُکانُ اَرْضِک فَکنْ عَلَینا بِالْفَضْلِ جَواداً وَ بِالْخَیرِ عَوّاداً یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ وَ صَلَّى اللّهُ عَلى مُحَمَّدٍ وَ الِهِ صَلوةً داَّئِمَةً لا تُحْصى وَ لا تُعَدُّ وَ لا یقْدِرُ قَدْرَها غَیرُک یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ