Saturday, June 11, 2016

তারাবীহর সালাত

 

তারাবীহ অর্থ কি? এ সালাতকে কেন তারাবীহ নামকরণ করা হল?


তারাবীহ শব্দের অর্থ বিশ্রাম করা। তারাবীহ বহু দীর্ঘায়িত একটি সালাত। প্রতি চার রাকআত শেষে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে সেজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে তারাবীহ।


রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র তারাবীহর সালাত কী ধরণের বৈশিষ্টমন্ডিত ছিল?


লম্বা ও অনেক আয়াত এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে তিনি তারাবীহ পড়তেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ রাতের একাকী সকল সালাতই ছিল অতি দীর্ঘ। এমনকি কিয়াম, রুকু, সাজদা সবই ছিল খুব লম্বা ও ধীরস্থির।
আসসায়িব ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন :
كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئْيِنَ يَعْنِي بِمِئَاتِ الآيَاتِ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعَصَى مِنْ طُوْلِ الْقِيَامِ
অর্থাৎ ইমাম (পাঠক) সাহেব তারাবীহতে শত শত আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। (মুয়াত্তা : ১/১১৪)


তারাবীহ সর্বপ্রথম কোথায় চালু হয়।


আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মসজিদে নববীতে তারাবীহর সালাত সুন্নাত হিসেবে চালু করেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নিয়মিত প্রত্যহ জামা‘আতের সাথে তারাবীহ পড়তেন?


না। সাহাবায়ে কিরাম দুই বা তিন রাত্রি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র ইমামতিতে তারাবীহ পড়েছিলেন। উম্মাতের উপর এ সালাত ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে জামাআতের সাথে মসজিদে তারাবীহ পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,
وَلَمْ يَمْنَعْنِيْ مِنَ الْخُرُوْجِ إِلَيْكُمْ إِلاَّ أَنِّيْ خَشِيْتُ أَنْ تُفْتَرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِيْ رَمَضَانَ
অর্থাৎ (তারাবীহর সালাতে মসজিদে তোমরা একত্রিত হয়ে আমার জন্য যেভাবে অপেক্ষা করছিলে তা সবই আমি দেখেছি) কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল (আমি নিয়মিত এ সালাত আদায় করলে) তা তোমাদের জন্য ফরয হয়ে যেতে পারে। সে কারণে আমি (এ সালাতের জন্য) ঘর থেকে বের হইনি। আর এ ঘটনাটি ছিল রমযান মাসের (কোন এক রাতে)। (বুখারী : ২০১২; মুসলিম : ৭৬১)


তারাবীহর সালাত কত রাক‘আত?






এটি একটি ইখতিলাফী অর্থাৎ মতবিরোধপূর্ণ মাস্আলা। কেউ কেউ বলেছেন, বিতরসহ তারাবীহ ৪১ রাক‘আত। অর্থাৎ বিতর ৩ রাকআত হলে তারাবীহ হবে ৩৮ রাক‘আত। অথবা বিতর ১ রাকআত ও তারাবীহ ৪০ রাকআত। এভাবে তারাবীহ ও বিতর মিলে:
কেউ বলেছেন ৩৯ রাকআত (তারাবীহ ৩৬ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ২৯ রাকআত (তারাবীহ ২৬ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ২৩ রাকআত (তারাবীহ ২০ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ১৯ রাকআত (তারাবীহ ১৬ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ১৩ রাকআত (তারাবীহ ১১ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ১১ রাকআত (তারাবীহ ৮ + বিতর ৩)
২০ রাকআত তারাবীহ সালাতের পক্ষে দলীল
(ক) বিতর ছাড়া ২০ রাক‘আত তারাবীহ সালাতের পক্ষে দলীল হল মুসান্নাফে আঃ রায্যাক হতে বর্ণিত ৭৭৩০ নং হাদীস, যেখানে বর্ণিত হয়েছে :
أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَي بنِ كَعَبٍ وَعَلَى تَمِيْمِ الدَّارِيْ عَلَى إِحْدى وَعِشْرِيْنَ مِنْ رَكْعَةِ يَقْرَؤُنَ بِالْمَئِيين
উমার (রাযি.) রমযানে উবাই ইবনে কাব ও তামীম আদদারীকে ইমামতিতে লোকদেরকে একুশ রাকআত সালাতের প্রতি জামাআতবদ্ধ করেছিলেন। (অর্থাৎ তারাবীহ ২০ ও বিতর ১ রাকআত)
(খ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন যে,
كَانَتْ صَلاَةُ النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- ثَلاَثَ عَشَرَةَ رَكْعَةً يَعْنِيْ مِنَ اللَّيْلِ
‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র রাতের সালাত ছিল ১৩ রাক‘আত।’’ (বুখারী : ১১৩৮; মুসলিম : ৭৬৪)
(গ) মা আয়িশাহ  (রাঃ) বলেন,
مَا كَانَ يَزِيْدُ فِيْ رَمَضَانَ وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدى عَشَرَةَ رَكْعَةً
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্য সময়ে (রাতে) ১১ রাকআতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। (বুখারী : ২০১৩; মুসলিম : ৭৩৮) অর্থাৎ তারাবীহ ৮ রাকাআত এবং বিতর ৩ রাকাআত।
(ঘ) ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
أَمَرَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أُبَيْ بْنِ كَعَبٍ وَتَمِيْمَا الدَّارِيِّ أَن يَّقُوْمَ لِلنَّاسِ بِإحْدى عَشَرَةَ رَكْعَةٍ
‘উমার ইবনু খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু (তার দুই সঙ্গী সাহাবী) উবাই ইবনে কাব তামীম আদদারীকে এ মর্মে নির্দেশ দিলেন যে, তারা যেন লোকদেরকে নিয়ে (রমযানের রাতে) ১১ রাকআত কিয়ামুল্লাইল (অর্থাৎ তারাবীহর সালাত) আদায় করে। (মুয়াত্তা মালেক : ১/১১৫)
উল্লেখ্য যে, সৌদী আরবের মসজিদগুলোতে তারাবীহ ও বিতর মিলে ১১ বা ১৩ রাকআত পড়লেও মাক্কার হারামে ও মাদ্বীনার মসজিদে নববীতে তারাবীহ ২০ এবং বিতর ৩ মিলিয়ে মোট ২৩ রাকআত পড়ে থাকে।
ফুটনোটঃ মূলত তারাবির মূল বিষয় লম্বা কিয়ামে সালাত আদায় করা অর্থাৎ দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে আদায় করা। রাসুল (সাঃ) এর ৮ রাকাত শেষ করতে প্রায় ফজর হয়ে যেত। বর্তমানে আমাদের উপমহাদেশে এই সালাতের রাকাত সংখ্যা নিয়ে প্রচুর বিরোধ দেখা যায় এমনকি এটা নিয়ে বিভিন্ন দলে উপদলেও মানুষ বিভক্ত হয়ে যায় এবং কোথাও বা বিবাদে লিপ্ত হতে দেখা যায়।

মূল বিষয় হচ্ছে আপনি ইমামের সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিয়াম করবেন তা ৮ রাকাত হোক বা ২০ রাকাত হোক। রাকাতের সংখ্যা নিয়ে নিজেদের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই কেননা রাসুল (সাঃ) রাকাতের সংখ্যা ফিক্সড করে দেন নাই বরং তা উন্মুক্ত। আপনি যদি একাকী ঘরে আদায় করেন তো ২ রাকাত ২ রাকাত করে যত রাকাত খুশি আদায় করতে পারেন আর শেষ করতে চাইলে ১ রাকাত বিতর আদায় করে নিবেন (বিতর ১, ৩, ৫ বা ৭, ৯ রাকাত দিয়ে আদায় করা যায়)।

তবে আমাদের দেশে দ্রুতবেগে কিরাত করে যেভাবে তারাবী আদায় করা হয় তা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং সুন্নাতের বরখেলাপ। সূরা কিরাত হতে হবে স্বাভাবিক গতিতে, ১ ঘণ্টায় ২০ রাকাত আদায় করা থেকে ১ ঘণ্টায় ৮ রাকাত উত্তম তেমনি ১ ঘণ্টায় ৮ রাকাত থেকে দেড় ঘণ্টার ২০ রাকাত উত্তম।

মূল বিষয় কত সময় এবং কত সুন্দর ভাবে আপনি এই সালাত আদায় করেছেন এটাই মুখ্য, রাকাতের সংখ্যা মুখ্য নয়।

সংযুক্তিঃ বাংলা হাদিস
 

তারাবীহর সংখ্যার মতবিরোধের মধ্যে কোনটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য?


মালেকী মাযহাবের ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন, একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকেরা ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়েছে। শাফেঈ মাযহাবের ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন, তিনি তারাবীহ মদ্বীনায় ৩৬ এবং মাক্কায় ২০ রাকআত পড়তে দেখেছেন। সৌদী আরবের গ্র্যান্ড মুফতী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) ১০ ও আট রাকআতের মাসআলাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
এ জাতীয় মত পার্থক্যের সমাধানকল্পে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহ.) বলেছেন, অধিক সংখ্যক রাকআত পড়াই উত্তম। আর যদি কেউ কম সংখ্যক রাকআত পড়তে চায় তাহলে তার উচিৎ হবে তিলাওয়াত, কিয়াম, রুকু ও সিজদা দীর্ঘ করা। তিনি আরো বলেছেন যে, তারাবীহকে রাকআত সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং সময় ব্যয়ের পরিমাণ দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিৎ। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ১১ রাকআতের মধ্যে ৫ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করেছেন। সালাতের কিয়ামে এত দীর্ঘ সময় কেটে যেত যার কারণে সাহাবীগণ লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
সবশেষে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) আরেকটি মত ব্যক্ত করে বলেছেন, সার্বিক বিশ্লেষণে তারাবীহ ২০ রাকআত পড়াই উত্তম। কারণ এটা ১০ ও ৪০ রাকআতের মাঝামাঝি এবং বেশির ভাগ মুসলমানের আমলও এরই উপর।
তবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, আমাদের দেশে তারাবীহ যেভাবে তাড়াহুড়া করে পড়া হয় তা পরিহার করে বিশুদ্ধ ও ধীরস্থির তিলাওয়াত, রুকু থেকে উঠার পর এবং দু’ সিজদার মাঝে আরো একটু সময়ক্ষেপণ করা, সুন্নাত মোতাবিক ও ধীরস্থিরভাবে রুকু-সিজদাহ ইত্যাদি সুন্দর করে তারাবীহ আদায় করা অত্যাবশ্যক। যে পদ্ধতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত আদায় করতেন আমাদেরও উচিৎ সে তরীকামত আদায় করা।
 

তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের ফযীলত জানতে চাই।


(ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَاتَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সাওয়াবের আশায় রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্ববতী (সগীরা) গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। (বুখারী : ৩৭; মুসলিম : ৭৫৯)
إِيْمَانًا ঈমান অবস্থায় অর্থ হল, এমন বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তাকে এ কাজের বদলা দিবেন এবং اِحْتِسَابًا অর্থ হল, এমনভাবে সাওয়াব আশা করবে যে, রাতের এ সালাত আদায় কোন মানুষকে দেখাবার বা শুনাবার জন্য নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য এবং তা শুধুমাত্র আল্লাহরই কাছ থেকে পুরস্কার লাভের আশায়।
(খ) অন্য হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
أََفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ
ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত)। (মুসলিম : ১১৬৩)


তারাবীহ সালাতের জামাআতে নারীদের শরীক হওয়া কি জায়েয?


ফিতনা-ফ্যাসাদের আশঙ্কা না থাকলে মাসজিদে তারাবীহর জামা‘আতে হাজির হওয়া মেয়েদের জন্য জায়েয আছে। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لاَ تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ
‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দা নারীদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না।’’ (বুখারী : ৯০০; মুসলিম : ৪৪২)


নারীরা মাসজিদে গেলে তাদের চালচলন ও পোশাক আশাক কী ধরনের হওয়া উচিত?


সম্পূর্ণ শরীয়াতসম্মত পর্দা করে মসজিদে যাবে। বাহারী ও রঙ বেরঙের বোরকা ও টাইট-ফিট পোশাক পরবে না। গল্পগুজব ও আওয়াজ করে কথা বলবে না। মেয়েদের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে সালাত আদায় করবে। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পরপরই মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাবে।


জামাআতে সালাত আদায় করলে নারীদের কোথায় দাঁড়ানো উত্তম?


নারীরা পিছনে দাঁড়াবে। এটাই সুন্নাত। তারা যত পিছনে দাঁড়াবে ততই উত্তম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
خَيْرُ صُفُوْفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوْفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا
পুরুষদের উত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার আর নিকৃষ্ট হলো শেষ কাতার। পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য উত্তম হলো শেষ কাতার আর নিকৃষ্ট হলো প্রথমকাতার। (মুসলিম : ৪৪০)


1 comment:

  1. Play'n GO - YouTube - Videodl.cc
    Play'n GO. Play'n GO is a premier online slot game with RTP 96.10%. Read our review and play youtube converter to mp3 this free demo!

    ReplyDelete