মহান
আল্লাহপাক কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন, ‘নারীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন
আছে তাদের ওপর পুরুষদের; কিন্তু নারীদের ওপর পুরুষদের মর্যাদা আছে। আল্লাহ
মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২৮] আল্লাহপাক আরো
বলেন, ‘তারা [নারীরা] তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।’ [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭] তিনি আরো বলেন, ‘তারপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে
সাড়া দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কমে-নিষ্ঠ কোনো নর অথবা নারীকে
কর্ম-বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯৫]
আমরা মুসলমান ও মুমিন; তাই আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও তাঁর
জান্নাত লাভের শর্ত হলো তাঁর আনুগত্য ও তাকওয়া এবং তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির
কারণ হলো তাঁর নাফরমানি। আল্লাহপাক বলেন, ‘কেউ দান করলে ও পরহেযগার হলে, যা
উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেবো সহজ পথ। এবং
কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা
অস্বীকার করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেবো কঠোর পথ।’ [সূরা আল-লায়ল, আয়াত
৫-১০]
আমরা জানি, স্ত্রীর ওপর স্বামীর যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি স্বামীর ওপর
স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। অপরের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন হলে পরিবার ও সমাজে
বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দেখা দেয় আবার অন্যের অধিকার সম্পর্কে সতেচন হলে সমাজ ও
পরিবারে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজমান থাকে। অধিকাংশ বিবাহিত নারী-পুরুষই
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে অসচেতন। বিশেষ করে পুরুষেরা তাদের
স্ত্রীদের অধিকার সম্পর্কে বেশি অসচেতন।
আমাদের সমাজে অনেক পরিবার আছে যেখানে প্রায়ই লজ্জাজনক ঘটনা ঘটে। এর প্রধান
কারণ হচ্ছে স্বামী তার স্ত্রীর অধিকার ও নিজের করণীয় সস্পর্কে সচেতন নয় এবং
স্ত্রীও স্বামীর অধিকার সস্পর্কে সচেতন নয়। অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে অজ্ঞ ও
অসচেতন হলে সেগুলো প্রদান করা ও সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। বিয়ের আগেই
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে জানা জরুরি। বিশেষ করে স্বামীর
জন্য এ-বিষয়ে সচেতন হওয়া অতি আবশ্যক। আমাদের দেশে বিয়ের পর মেয়েদের প্রতি
যে পীড়নাত্মক মনোভাব পোষণ করা হয় ইসলাম তো তার নিন্দা করেই এবং মানবিকভাবেও
তা গর্হিত। একটি মেয়ে যেখানে বেড়ে উঠেছে ও বড় সেই পরিবেশ ও ঘরবাড়ি ছেড়ে
অন্যের বাড়িতে যায়, এমনিতেই তার মানসিক অবস্থা খারাপ থাকে, তারপরও তাকে
বিভিন্ন পরীা করা হয়। অনেক সংসারের সমস্ত বোঝা তার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
সংসারের সবার দেখাশোনার ভার তাকে দেওয়া হয়। এসব কাজে অবহেলা বা ত্রুটি ঘটলে
তাকে গালমন্দ ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়। এসব কাজ ইসলামে নিন্দিত ও
গর্হিত।
স্বামীর সংসারের সব কাজ স্ত্রীকে দিয়ে করানোর একটা প্রবণতা আমাদের দেশে
আছে। রান্না-বান্না করো, শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করো, স্বামীর সেবা করো, তার
প্রতিটি আদেশ পালন করো, দেবর-ননদের খোঁজ-খবর রাখো, তাদের খাওয়া-দাওয়া
পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা দেখো − আরো কতো কী কাজ স্ত্রীকে দিয়ে করানো হয়
এবং করতে না পারলে তার নিন্দা করা হয়। গালমন্দ করা হয়। কিন্তু এসব দায়িত্ব
পালন করা তো স্ত্রীর কাজ নয়। সে যদি স্বেচ্ছায় এসব কাজ করে তাহলে সমস্যা
নেই; কিন্তু এসব কাজ করতে তাকে বাধ্য করা যাবে না।
ইসলাম একটি বাস্তব-সম্মত ও সবার উপযোগী ধর্ম। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়
জীবনে প্রত্যেকের দায়িত্ব কী তা ইসলামে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। ইসলাম
মানুষকে আকাশেও তুলে দেয় না, মাটির নিচেও পুঁতে ফেলে না − ইসলাম মধ্যপন্থা
জীবন-ব্যববস্থার নাম। কাজের বিনিময়ে থাকবে কর্মফল, ঈমান ও আমলেন বিনিময়ে
পুণ্য, কুফরির বিপরীতে আছে শাস্তি, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার
আবশ্যকভাবে আদায় করতে হবে − এসব মৌলিক নীতির ওপর ইসলাম মানুষের
জীবন-ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কর্তব্য তিন
ধরনের: ১. স্ত্রীর জন্য স্বামীর কর্তব্য; ২. স্বামীর জন্য স্ত্রীর কর্তব্য
এবং ৩. উভয়ের পারস্পরিক কর্তব্য। আমরা স্ত্রীর জন্য স্বামীর কী কর্তব্য ও
দায়িত্ব তা নিয়ে আলোচনা করবো। ইসলাম স্ত্রীর জন্য স্বামীকে যেসব অধিকার ও
দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে তা হচ্ছে :
১. স্ত্রী-গমনের আগে বা পরে স্ত্রী যখনই উভয় পরে সম্মতিতে নির্ধারিত
দেনমোহর চাইবে, স্বামীকে তখনই তা দিতে হবে। (আমাদের দেশে এক মারাত্মক ভুল
প্রথা প্রচলিত আছে: স্ত্রীর কাছ থেকে দেনমোহর মা করিয়ে নেওয়া। বাসর রাতে বা
তার পরে স্ত্রীর কাছ থেকে দেনমোহর মা করিয়ে নেওয়া হয়। এর অর্থ হচ্ছে,
স্বামী স্ত্রীকে বলে, আমি তোমার দেনমোহর দিতে পারবো না বা কিছু দিলাম, তুমি
কিছু মনে করো না বা আমাকে মাফ করে দাও। বাসর রাতে বা অন্য সময়ে এভাবে
দেনমোহর মা করিয়ে নিয়ে তো বৈধ নয়ই, বরং তা লজ্জাজনক ও গর্হিত। শুধু মৌন
সম্মতি নয়, স্ত্রী যদি মুখেও বলে, আমি তোমার জন্য আমার দেনমোহর মা করে
দিয়েছি, তারপরও তা মা হবে না এবং দেনমোহর প্রদানের আবশ্যকতা সামান্যতম
হ্রাস পাবে না। তবে স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেনমোহরের সামান্য অংশ
ছেড়ে দেয়, স্বামী তা ভোগ করতে পারবে। এ-ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের
সচেতনতা কাম্য এবং বিয়ের আগেই দেনমোহরের অর্থ সংগ্রহ করে রাখা উচিত।)
দেনমোহর দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামীর কাছে নিজেকে অর্পণ না করার অধিকার
স্ত্রীর আছে। এজন্য স্ত্রী আল্লাহর নাফরমানি করেছে বা স্বামীর অবাধ্য হয়েছে
তা বলা যাবে না এবং এই অপবাদ দিয়ে তার খরচাদি বন্ধ রাখা যাবে না।
আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আর তোমরা নারীদের মাহ্র স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে
প্রদান করবে।’ [সূরা নিসা, আয়াত ৪] তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাদের
নির্ধারিত মাহ্র প্রদান করবে।’ [সূরা নিসা, আয়াত ২৪] এসব আয়াতের মাধ্যমে
ইসলাম স্ত্রীকে নিজ সত্তার অধিকার প্রদান করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দেনমেহারের অনাধিক্য, সহজ বিবাহ ও সচ্চরিত্র
স্ত্রীর জন্য কল্যাণকর। দেনমোহরের আধিক্য, কঠিন [অধিক খরুচে] বিবাহ ও
অসচ্চরিত্রতা স্ত্রীর জন্য অশুভ।’
২. স্বামীর বৈষয়িক সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে খরচ প্রদান করতে হবে। খরচ
বলতে বোঝানে হয়েছে: খাদ্য, পানীয়, পোশাক, বাসস্থান। এর প্রতিটি বিষয় বৈধ ও
হালাল হতে হবে। হারাম উপর্জন থাকতে পারবে না এবং হারাম হওয়ার সন্দেহও থাকতে
পারবে না। স্বামী যদি একা (রেস্টুরেন্টে বা অন্য কোথাও) ভালো খাবার খায়,
ভালো পোশাক পরে, দাওয়াত খায় বা ভ্রমণে বের হয় এবং স্ত্রীর েেত্র এসব
ব্যাপারে কার্পণ্য করে, তা হবে গর্হিত ও আত্মসম্মান হানিকর। স্বামী যদি এসব
কাজ করে যেতে থাকে, স্ত্রীকে পানাহার থেকে বঞ্চিত রাখে বা স্ত্রীর খাবারের
চেয়ে ভালো ভালো খাবার খায়, তার পোশাকের চেয়ে ভালো পোশাক পরে, তা বিরাট পাপ
ও মার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহপাক আদেশ দিয়েছেন, ‘বিত্তাবান নিজ সামর্থ্য
অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা
থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে গুরুতর বোঝা
তিনি তার ওপর চাপান না। আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন স্বস্তি।’ [সূরা তালাক,
আয়াত ৭] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি নিজে
যা খাবে, স্ত্রীকে তাই খাওয়াবে, তুমি যে-মানের পোশাক পরবে, স্ত্রীকে সেই
মানের পোশাক পরাবে। তার চেহারায় আঘাত করবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং ঘর
ছাড়া তাকে কোথাও ফেলে রাখবে না।’
যে-গৃহকর্তা নিজের জন্য যথাযথ খরচ করে এবং স্ত্রী ও সন্তানের ব্যয়ভার বহনে
কৃপণতা ও তারতম্য করে, তার পরিবারে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এসব
ব্যাাপর প্রথমে স্ত্রীকে তারপর সন্তানদেরকে বিশৃঙ্খল ও বিকৃত জীবনের পথে
ঠেলে দেয়। এমন আচরণ স্বামীর জন্য হারাম, ইসলাম তা নিষিদ্ধ করেছে ও শাস্তির
বিধান রেখেছে। তাছাড়া পরিবার পরিজনের জন্য খরচ করা, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা
বিশাল পুণ্যের কাজ বলে ইসলাম ঘোষণা করেছে এবং এর বিনিময়ে প্রতিদান নিশ্চিত
করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি
তার পরিবারের জন্য পুণ্য অর্জনের ল্েয খরচ করবে তা দান হিসেবে গৃহীত হবে।’
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি যে-দিনার আল্লাহর পথে দান করো, যে-দিনার দাস
আযাদের েেত্র ব্যয় করো, যে-দিনার মিসকিনকে প্রদান করো এবং যে-দিনার
পরিবারের জন্য খরচ করো − তার মধ্যে পরিবারের জন্য যা খরচ করো তার প্রতিদান
হবে সবচেয়ে বেশি।’ বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে, হিন্দা রা. এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ,
[আমার স্বামী] আবু সুফ্য়ান কৃপণ লোক। সে আমাকে ও আমার ছেলেকে কিছু দেয় না।
তবে আমি তার অজ্ঞাতসারে তার [পকেট বা থলে] থেকে [টাকা-পয়সা] নিয়ে নিই।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার ও তোমার ছেলের জন্য
যা যথাযথ দরকার তা [এভাবে] নিয়ে নেবে।’
৩. স্ত্রীকে আখরাতের আযাব থেকে রা করার জন্য তাকে দীন শিা দিতে হবে। তাকে
ঈমান, আল্লাহপাকের বড়ত্ব ও মহত্ত বোঝাতে হবে। পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা,
ইবাদত − নাযাম, রোযা, হজ, যাকাতের হুকুম-আহকাম শেখাতে হবে। বর্তমান যুগে
নারীরা যেসব পাপাচার ও শিরকে লিপ্ত − বেপর্দা হয়ে ঘোরা-ফেরা করা, অনৈসলামিক
কর্মকা-ে অংশ গ্রহণ করা, মাজারে যাওয়া, ভ- পীরদের মুরিদ হওয়া, তাদের কাছে
সাহায্য প্রার্থনা করা, সেগুলো থেকে বাঁচাতে হবে। তাদেরকে সচ্চরিত্র,
আত্মার পরিত্রতা, হৃদয়ের স্বচ্ছতা, হিংসা, বিদ্বেষ ও লৌকিকতা থেকে বেঁচে
থাকা, জিহ্বাকে পরচর্চা, গালি-গালাজ, মিথ্যাচার ও অভিশাপ দেওয়া থেকে রা করা
− এসব বিষয় শিা দিতে হবে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা
নিজেদেরকে ও পরিবার পরিজনকে আগুন থেকে রা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও
পাথর।’ [সূরা তাহরীম, আয়াত ৬] আদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, ‘এই আয়াত নাযিল
হওয়ার পর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা
তো নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারি, কিন্তু পরিবার-পরিজনকে
কীভাবে বাঁচাবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ
যেসব কাজের আদেশ করেছেন, তোমরা তাদের সেসব কাজের আদেশ করবে, আর আল্লাহ যেসব
কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন সেসব কাজ থেকে তাদের বিরত রাখবে। এভাবে
জাহান্নামের আগুন থেকে রা করা হবে।’ হযরত আলী রা. বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের
জ্ঞান ও শিষ্টাচার শিা দাও।’
৪. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচার করতে হবে এবং তার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে হবে।
এমনকি ক্রোধ ও ঘৃণার অবস্থায়ও স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। আল্লাহপাক
ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন-যাপন করবে; তোমরা যদি
তাদেরকে অপছন্দ করো তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ
রেখেছেন তাকেই তোমরা অপছন্দ করছো।’ [সূরা নিসা, আয়াত ১৯] রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ কোনো
মুমিনা নারীর কিছু স্বভাব পছন্দ করলে আর কিছু স্বভাব অপছন্দ করলে তার থেকে
বিচ্ছিন্ন হবে না।’ স্ত্রীর দায়িত্ব হলো স্বামীর অজ্ঞাতসারে বাইরের বা
আত্মীয় কোনো পুরুষকে এবং অপরিচিত বা কাছের কোনো মহিলাকে ঘরের ভেতর ঢুকতে না
দেওয়া। স্বামীও আত্মীয় বা কাছের বা অপরিচিত কোনো মহিলার কাছে যাবে না। এতে
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার হনন এবং ফেতনা ও অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা
রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কখনো
বেগানা নারীদের কাছে যাবে না।’ সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হাম্উ [স্বামী বা
স্ত্রীর নিকটাত্মীয়] সম্পর্কে আপনার কী মতামত?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হাম্উ মৃত্যুস্বরূপ।’ হাম্উ হচ্ছে স্বামী পরে
নিকটাত্মীয়, যেমন স্বামীর ভাই, তার চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো ভাই ও তার ঘনিষ্ঠ
বন্ধু-বান্ধব অথবা স্ত্রী পরে নিকটাত্মীয়, যেমন স্ত্রীর বোন, তার
চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো বোন ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না: ১. মদ
পানকারী; ২. মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্যাচরণকারী এবং ৩. কোটনা বা ছিনাল স্বামী,
যে পরিবারে অশ্লীলতা বিস্তার করে এবং ঘরে কে এলো-গেলো সে-ব্যাপারে ভ্রƒপে
করে না।’
৫. স্ত্রীকে ফেতনার দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। এর অর্থ হচ্ছে, দীর্ঘদিন
স্ত্রী থেকে দূরে থাকা, স্ত্রীকে নিয়ে গান-বাজনার আসরে যাওয়া, তাকে অশ্লীল
গল্প-উপন্যাস কিনে দেওয়া, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে
পরপুরুষদের সঙ্গে আনন্দ করা এবং এ-জাতীয় কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে হবে।
হালালের চেয়ে হারাম বিষয়ে মানুষের আসক্তি বেশি। এ-আসক্তি পুরুষের যেমন আছে,
নারীরও আছে। হযরত উমর রা. কোনো মজাহিদকে চারমাসের বেশি স্ত্রী থেকে দূরে
থাকতে দিতেন না। এতে তিনি ফেতনার আশঙ্কা করতেন। কারণ তিনি তাঁর কন্যা হাফসা
রা. থেকে জানতে পেরেছিলেন, স্ত্রী স্বামীর ব্যাপারে চার মাসের বেশি ধৈর্য
ধারণ করতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা
ফাতেমাতুয যাহ্রা রা.-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলো তো উত্তম নারী কে? ফাতেমা
রা. বলেছিলেন, ‘যে-নারীকে কোনো পুরুষ দেখে না এবং সেও কোনো পুরুষকে দেখে
না।’ এই উত্তর শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বুকে
জড়িয়ে ধরেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আমরা একে অপরের বংশধর।’ [আল র্বারায ও দারা
কুতনি]
৪. শয্যায় স্ত্রীর হক আদায় করতে হবে এবং তার মানসিকতার প্রতি ল্য রাখতে
হবে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি
তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে
তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি সৃষ্টি করেছের পারস্পরিক ভালোবাসা ও
সহানুভূতি। [সূরা রূম, আয়াত ২১]
৫. মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের ক্ষেত্রে ভালোবাসার সামঞ্জস্যবিধান
করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তান − প্রত্যেকের
অবস্থান আলাদা আলাদা। তাদের অবস্থান ঠিক রেখে সবার সঙ্গে যথাযথ আচরণ করতে
হবে। একজনের ক্ষেত্রে বেশি আরেকজনের ক্ষেত্রে কম − এমনটি করা যাবে না।
৬. নিজের স্ত্রীর সামনে অন্যান্য মহিলার গুণাবলি বর্ণনা করা যাবে না। এমনকি তারা খালা, ফুফু বা মা হলেও তা করা যাবে না।
৭. স্ত্রীকে জীবনের একটা অংশ ভাবতে হবে এবং কীভাবে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করা যায় তার চেষ্টা করতে হবে।
৮. কোনো মন্দ কাজ করলে স্ত্রীর প্রতি কঠোর না হয়ে তাকে বোঝাতে হবে এবং ভালো কাজ করলে তার প্রশংসা করতে হবে।
৯. প্রেম, ভালোবাসা, আদর, যতই − দাম্পত্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বামী
যেমন আশা করে তার স্ত্রী কেবল তারই হবে, তেমনি সেও মনেপ্রাণে কেবল তার
স্ত্রীরই হবে।
১০. স্ত্রীকে মা-বাবার কাছে যাওয়া, তার বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা-সাাৎ করার সুযোগ দিতে হবে।
১১. স্বামী তার স্ত্রীর ওপর তার মতামত চাপিয়ে দিতে পারবে না। পরিবারে পরস্পরের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
এসব হলো স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার। সৎ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন-যাপন করতে
এসব অধিকার আদায়ের বিকল্প নেই। ইসলাম মানুষের জন্য আদর্শ, শৃঙ্খলিত ও
আনন্দঘন জীবনধারা নির্দেশ করেছে। এর বাইরে গিয়ে সুখী জীবন-যাপন করার কোনো
সুযোগ নেই; আগেও ছিলো না, বর্তমানে আরো নেই।
No comments:
Post a Comment