Wednesday, June 1, 2016

বনি ইসরাইলের অতীত ইতিহাসের ওপর আলোকপাত!

হজরত ইউশা [আ.]-এর যুগে বনি ইসরাইল ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার পর মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি সেই এলাকা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন, যাতে তারা ওখানে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে এবং সত্যধর্মের জন্য কাজ করতে পারে। তাওরাতে ইয়াশুআর ২৩ নং অধ্যায়ে ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত রয়েছে। হজরত ইউশা [আ.] শেষ জীবন পর্যন্ত তাদের তত্ত্বাধান করেছেন এবং তাদের অবস্থার সংশোধনে সচেষ্ট থেকেছেন। এ সময় তিনি তাদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ নিরসন করার জন্য বেশ কয়েকজন বিচারকও নিযুক্ত করে দেন, যাতে তারা আগামীতেও এভাবে নির্ধারিত নীতিমালা ও শৃঙখলা ধরে রাখে।
হজরত মুসা [আ.]-এর জন্মের প্রায় সাড়ে তিনশো বছর পূর্ব পর্যন্ত সেই শৃঙখলা এভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো যে, গোষ্ঠী ও বংশগুলোর ওপর ‘সরদাররা’ শাসন করতেন এবং তাদের পারস্পরিক বিবাদ ও লেনদেনগুলোর ক্ষেত্রে ‘কাযি’ ফয়সালা করতেন। আর ‘নবী’ উলি­খিত বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করার সঙ্গে সঙ্গে দীনের দাওয়াত ও তাবলিগের খেদমত আঞ্জাম দিতেন। কখনো কখনো এমনও হতো যে, আল্লাহর অনুগ্রহে তাঁদের মধ্য থেকে কোনো কাযিকে নবুওত প্রদান করা হতো। এই দীর্ঘ সময়ে বনি ইসরাইলে একক ক্ষমতার অধিকারী কোনো বাদশাহ ছিলো না। তাদের সকলের একক শাসক না থাকার ফলে আশ-পাশের জাতিগুলো প্রায়সময় তাদের ওপর আক্রমণ করতো আর বনি ইসরাইল হতো তাদের সেই আক্রমণের লক্ষ্য। কখনো আমালিকা সম্প্রদায় আক্রমণ করতো। কখনো ফিলিস্তিনিরা তেড়ে আসতো। কখনো মাদায়িনিরা হামলে পড়তো। কখনো আরামি গোত্রের লোকেরা আক্রমণ করতো। এই জাতিগুলোর কোনোটি কখনো আক্রমণ করে পরাজিত হলেও পরবর্তীকালে আবার আক্রমণ ও লুটপাট করতো। এভাবেই দিন অতিবাহিত হতো। কখনো এরা বিজয়ী হতো, আবার কখনো ওরা বিজয়ী হতো।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষদিকে আইলি কাহেনের যুগে আশদুদ ও গাজার আশপাশের ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী তাদের ওপর ভয়াবহ আক্রমণ করে এবং তাদেরকে পরাজিত করে বরকতময় সিন্দুক ‘তাবুতে সাকিনাহ’ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই সিন্দুকে তাওরাতের মূল ফলক, হজরত মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামের লাঠি, জামা এবং মান্না-এর চিনামাটির তৈজসপত্র সংরক্ষিত ছিলো। ফিলিস্তিনিরা বস্তুগুলোকে তাদের প্রসিদ্ধ মন্দির বাইতে দাজুনে রেখে দেয়। এই মন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছিলো তাদের সবচেয়ে বড় দেবতা ‘দাজুন’-এর নামে। দাজুনের দেহ ছিলো মানুষের চেহারা ও মাছের মুণ্ডুর আকৃতিতে তৈরি। ওই মন্দিরে সেই দাজুন দেবতার প্রতিকৃতি রাখা ছিলো। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নাজ্জার মিসরি বলেন, ফিলিস্তিনের বিখ্যাত নগরী রামাল্লার কাছে আজও একটি জনপদ পাওয়া যায়, যার নাম ‘বাইতে দাজুন’। প্রবল ধারণামতে, তাওরাতে দাজুনের যে মন্দিরের কথা বলা হয়েছে সেটি এখানেই অবস্থিত ছিলো। তার দিকে সম্পৃক্ত করেই এ জনপদের নাম রাখা হয়েছিলো ‘বাইতে দাজুন’।
সূত্র : কাসাসুল কুরআন, তাফসিরে ইবনে কাসির
হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

No comments:

Post a Comment