Saturday, June 11, 2016

ই‘তিকাফ

ই‘তিকাফ কী? এর হুকুম কী?


দুনিয়াবী সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করাকে ই‘তিকাফ বলা হয়ে থাকে। ইতেকাফ করা সুন্নাত।


ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য কী?


দুনিয়াদারীর ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া, বিনয় নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য।


ই‘তিকাফের জন্য কী কী শর্ত পূরণ আবশ্যক?


(ক) মুসলমান হওয়া
(খ) জ্ঞান থাকা
(গ) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া।
(ঘ) মসজিদে ই‘তিকাফ করা।
কাজেই কাফির-মুশরিক, অবুঝ শিশু, পাগল ও অপবিত্র লোক এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় নারীদের ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।


ই‘তিকাফের রুকন কয়টি ও কী কী?


এর রুকন ২টি :
(ক) নিয়ত করা
(খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ই‘তিফাক করলে তা শুদ্ধ হবে না।


মেয়েরা কি নিজ বাসগৃহে ই‘তিকাফ করতে পারবে?


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় নারীরা মসজিদে ই‘তিকাফ করতেন।


ই‘তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ নিষিদ্ধ?


তা হল :
(১) স্বামী স্ত্রীর মিলন, স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা,
(২) মাসজিদ থেকে বের হওয়া। বেচাকেনা, চাষাবাদ, এমনকি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্যও মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।


বিশেষ প্রয়োজনে ই‘তিকাফ অবস্থায় মাসজিদ থেকে বের হতে পারবে কি?


মাসজিদের গন্ডির মধ্যে ব্যবস্থা না থাকলে শুধুমাত্র মানবিক প্রয়োজনে প্রস্রাব-পায়খানা, খাওয়া-দাওয়া ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে, দলীল :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا اعْتَكَفَ لاَ يَدْخُلُ الْبَيْتَ إِلاَّ لِحَاجَةِ الإِنْسَانَ
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একান্ত (পেশাব-পায়খানার) প্রয়োজন পূরণ ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ ছেড়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেন না।’ (মুসলিম : ২৯৭)
তবে মাসজিদে এসব ব্যবস্থা থাকার পর যদি কেউ বাইরে যায় তাহলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ই‘তিকাফ অবস্থায় এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী সাফিয়াকে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। (বুখারী)


কী কী কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?


নিম্ন বর্ণিত যে কোন একটি কাজ করলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে।
২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌনসম্ভোগ করলে।


ই‘তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ করা বৈধ অর্থাৎ মুবাহ?


ই‘তিকাফকারীদের জন্য নিম্নোক্ত কাজ করা বৈধ :
১. একান্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা।
২. চুল আঁচড়ানো, মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা।
৩. মসজিদের ভিতরে পানাহার করা, ঘুমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহের কাবিননামা ও ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিও সম্পাদন করা যাবে।


ই‘তিকাফকারীর দায়িত্ব ও করণীয় কাজ কী কী? এবং তাঁর কী ধরনের ইবাদত করা উচিত?


উত্তম হল নফল ইবাদত বেশি বেশি করা। যেমন সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা, যিকর-আযকার ও তাসবীহ, তাহলীল করা অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, তাওবাহ-ইস্তেগফার, দু‘আ, দুরূদ ইত্যাদি ইবাদতে সর্বাধিক সময় মশগুল থাকা। তাছাড়া শরীয়া বিষয়ক ইলম চর্চা করা।
পার্থিব ব্যাপারে কথাবার্তা বলা, অনর্থক গল্পগুজব ও আলোচনা থেকে বিরত থাকা উচিৎ, তবে পারিবারিক কল্যাণর্থে বৈধ কোন বিষয়ে অল্পস্বল্প কথাবার্তা বলার মধ্যে কোন দোষ নেই।


ই‘তিকাফ শুধুই রমযান মাসে? নাকি অন্য সময়ও করা যায়?


বৎসরের যে কোন সময় ই‘তিকাফ করা যায়। এজন্য নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ নেই। যিনি যখন চাইবেন তখনি ই‘তিকাফ করতে পারবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার শাওয়াল মাসেও ই‘তিকাফ করেছেন। ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার মাত্র এক রাত ই‘তিকাফ করেছিলেন।


ই‘তিকাফের জন্য কোনটি উত্তম সময়?


রমযান মাস হচ্ছে ই‘তিকাফের উত্তম সময়। আরো উত্তম হচ্ছে রমযানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা।


সর্বনিম্ন কী পরিমাণ সময় ই‘তিকাফ করা যায়?


এটি একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। শাইখাইনের মতে ই‘তিকাফের ন্যূনতম সময়সীমা ১দিন। কেননা, হানাফী মতে ই‘তিকাফের জন্য রোযা শর্ত। আর রোযা ১ দিনের কমে পূর্ণ হয় না।


ই‘তিকাফ কখন শুরু ও শেষ করব?


ফযরের সালাত আদায় করে বা সূর্যাস্তের পর ই‘তিকাফে প্রবেশ করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। আর শেষ করবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ই‘তিকাফ করেছেন?


প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ই‘তিকাফ করেছিলেন ২০ দিন। এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন বছরই তিনি ই‘তিকাফ থেকে বিরত থাকেননি। (বুখারী)


ই‘তিকাফ কত প্রকার ও কী কী?


ইসলামী শরীয়তে ই‘তিকাফ ৩ প্রকার।
(ক) ওয়াজিব ই‘তিকাফ : ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে ওয়াজিব ই‘তিকাফ হলো মানতের ই‘তিকাফ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلۡيُوفُواْ نُذُورَهُمۡ ... ٢٩ ﴾ [الحج: ٢٩] 
অর্থাৎ ‘‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।’’ (সূরা হাজ্জ : ২৯)
(খ) সুন্নাত ই‘তিকাফ : রমযানের শেষ ১০ দিনের ই‘তিকাফ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন :
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يَعْتَكِفُ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারী : ২০২৫; মুসলিম : ১১৭২)
(গ) মুস্তাহাব ই‘তিকাফ : উল্লেখিত দু’প্রকার ব্যতীত বাকী সব মুস্তাহাব ইতেকাফ।

1 comment:

  1. CASINO - Joliet - Casino - The Official Web site
    CASINO in Joliet, IL is your one-stop shop 문경 출장안마 for all your favorite games, sports betting, 성남 출장샵 dining and more. Book 전라남도 출장안마 online or call 파주 출장안마 now for 전라남도 출장안마 tickets.

    ReplyDelete